জানা গেছে, কৃষ্ণপুর গ্রামের আব্দুল হাই চৌধুরীর মেয়ে নুরুন্নাহার চৌধুরী ঝর্না গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর উচ্চ শিক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্র পড়তে যান। এরপর স্থানীয় মসজিদ কমিটি ঝর্নার পরিবারকে সমাজচ্যুত করে। পরে মেয়েটির পরিবারে অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে উপজেলা ও পুলিশ প্রশাসনের তৎপরতায় মসজিদ কমিটির লোকজন তাদের ভুল বুঝতে পেরে দুঃখ প্রকাশ করেন।
এই ঘটনায় কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর ওই ছাত্রীর বাবা আব্দুল হাই চৌধুরী গত সোমবার লিখিত অভিযোগ দেন।
ইউএনও বরাবর লিখিত অভিযোগ থেকে জানা যায়, নুরুন্নাহার চৌধুরী ঝর্না গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর উচ্চ শিক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে যান। সেখানে গিয়ে শার্ট ও জিন্সের পেন্ট পরে বিশ্ববিদ্যালয়ে যান। ঝর্নার ওই ছবি ফেইসবুকে পোস্ট করেন স্থানীয় কিছু যুবক।
এক পর্যায়ে মসজিদ কমিটি বৈঠক করে এবং সেখানে ঝর্নার বাবাকে ডাকা হয়। কিন্তু তিনি বৈঠকে যাননি। এরপর ওই বৈঠকে মসজিদ কমিটি তাদের সামাজচ্যুত করে।
এ বিষয়টি স্থানীয় এক লোক ফেইসবুকে পোস্ট করলে ঝর্নার পরিবারের লোকজন মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন বলে অভিযোগ জানানো হয়।
কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা – ইউএনও ফরহার চৌধুরী সংবাদমাধ্যমকে বলেন, “অভিযোগ পেয়ে সাথে সাথেই তাদের সতর্ক করেছি এবং এখন এ বিষয়ে উভয় পক্ষকে নিয়ে বৈঠক করছি। বৈঠকে স্থানীয় মসজিদ কমিটি, ওই শিক্ষার্থীর বাবা, স্থানীয় চেয়ারম্যান ও কুলাউড়া থানা পুলিশ প্রশাসনও আছেন।”
তিনি বলেন, “বর্তমান যুগে কাউকে সমাজচ্যুত করার সুযোগ নেই। বিষয়টি আমরা গুরুত্ব সহকারেই দেখছি।”
এ ব্যাপারে নুরুন্নাহার চৌধুরী ঝর্নার মা মিনারা চৌধুরী বলেন, তার মেয়ে বিভিন্ন সামাজিক উন্নয়নমূলক কাজে জড়িত। নারী সমাজের উন্নয়নে সে অনেক কাজ করেছে। ‘পজিটিভ জেনারেশন অব সোসাইটি, বাংলাদেশ’ নামে তার একটি উন্নয়ন সংগঠনও রয়েছে।
তিনি অভিযোগ করেন, তার মেয়ের লক্ষ্য পিছিয়ে পড়া নারী সমাজকে এগিয়ে নেওয়া। এই কাজে একটি মহল তার মেয়ের বিরুদ্ধে দেশে থাকাকালেই নানা অপপ্রচার চালায়।
এ ঘটনায় গত ৮ জানুয়ারি তার মেয়ে সিলেট শাহপরান থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন বলেও তিনি জানান।
তিনি বলেন, এই ঘটনায় তার স্বামী মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। আগে তিন বার তার ‘স্ট্রোক’ [মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ] হয়েছে। এখন স্বামীর সুস্থতা নিয়েও দুশ্চিন্তায়। এদিকে বিদেশে গিয়ে মেয়েও দুশ্চিন্তায়।
যোগাযোগ করা হলে যুক্তরাষ্ট্রে থাকা ঝর্ণা চৌধুরী বলেন, আমি কী পোশাক পরব, কার সঙ্গে ছবি তুলব, কার সঙ্গে চলব সেটা আমার সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত অধিকার। সেটা তো আমাকে এলাকার লোক নির্ধারণ করে দিতে পারে না। মসজিদ কমিটির লোকজন অতি উৎসাহী হয়ে অনধিকার চর্চার মাধ্যমে আমার পরিবারকে একঘরে করে দিয়েছে। এসব নারীবিদ্বেষী, মৌলবাদীদের অনেক আগেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারতাম। তবে অভিযুক্তরা ইউপি চেয়ারম্যানের কাছের লোক হওয়ায় তার কাছে অভিযোগ করেও লাভ হয়নি।
এ ব্যাপারে মসজিদ কমিটির সভাপতি মাখন মিয়া বলেন, “আমরা ইন্টারনেট বুঝি না। এলাকার কিছু লোক ভুল বুঝিয়ে এ কাজ করিয়েছে। এজন্য আমরা অনুতপ্ত। এই মুহূর্তে আমরা তাদের বাড়িতে আছি।”
নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে তারা এজন্য অনুতপ্ত বলে জানান মাখন মিয়া।
ঢাকা/মীম
0 মন্তব্যসমূহ