সর্বশেষ খবর

10/recent/ticker-posts

নারীর হাতে ট্রেনের স্টিয়ারিং।।BDNews.in


বিডি নিউজ ডেস্কঃ নগরের পাহাড়তলীর লোকোশেডে গতকাল সোমবার বেলা ২টায় বিশ্ববিদ্যালয় শাটল ট্রেনের ইঞ্জিনে উঠছিলেন সহকারী লোকোমাস্টার (চালক) সালমা বেগম। মাথায় ছিল ক্যাপ। আর পরনে অ্যাপ্রোন।

ইঞ্জিনের স্টিয়ারিং চালু করলেন। লোকোমাস্টার (গ্রেড-১) মীর এ বি এম শফিকুল আলম সিগন্যাল দিলেন যাওয়ার। ইঞ্জিন নিয়ে ছুটলেন চট্টগ্রাম স্টেশনের উদ্দেশে। সেখান থেকে তিনি ট্রেন নিয়ে যাবেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি)।(রেলওয়ে গ্যালারি পেইজের নিউজটি 'আজকের পত্রিকা' থেকে নেয়া)

ট্রেনে ওঠার আগে কথা বলেন আজকের পত্রিকার সঙ্গে। জানালেন সংসার সামলিয়ে ট্রেন চালানোর অভিজ্ঞতা।

সালমা বেগম বলেন, দুপুরে বাসা থেকে বের হওয়ার আগে রান্না-বান্না সেরেছেন। দুই ছেলেকে খাইয়েছেন। এর মধ্যে এক ছেলের বয়স সাড়ে ৪ বছর। আরেকটির বয়স দেড় বছর।

যে রাঁধে, সে চুলও বাঁধে। এই সত্যিটি প্রমাণ করেছেন সালমার মতো রেলওয়ের আরও ১৮ জন নারী চালক। ট্রেনে মূলত দুজন চালক থাকেন। একজন লোকোমাস্টার আরেকজন সহকারী। ওই সহকারী হিসেবে ১৯ জন নারী দায়িত্ব পালন করছেন।

রেলওয়ের বিভাগীয় যান্ত্রিক প্রকৌশলী মো. ওয়াহিদুর রহমান জানান, চট্টগ্রামে বিভাগে ৯ জন নারী চালক আছেন।

সালমা বেগম যখন ইঞ্জিনে উঠছিলেন তখন তাঁর হাতে সময় ছিল মাত্র ৩০ মিনিট। কারণ বেলা আড়াইটায় তাঁকে চট্টগ্রাম স্টেশনে পৌঁছতে হবে। তিনি বলেন, ‘২০১১ সালে সহকারী লোকোমাস্টার হিসেবে যোগ দিই। বিয়ে হওয়ার পর বাচ্চা-সংসার সব সামলিয়ে চাকরি করাটা খুব কঠিন ছিল। অনেক বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে এখন নিজেকে মানিয়ে নিয়েছি। দৃঢ় মনোবলের কারণে চ্যালেঞ্জিং এই পেশায় টিকে রয়েছি।’

কিছু দাবি জানিয়ে সালমা বেগম বলেন, ‘ট্রেন নিয়ে যে স্টেশনে যাই, ওইসব স্টেশনে নারীদের জন্য আলাদা কোনো রেস্ট রুম নেই। রেস্ট রুমের ব্যবস্থা করলে আমাদের জন্য অনেক ভালো হয়।’ সরকারের কাছে আমাদের দাবি, মাইলেজ ইস্যুটি যেন সমাধান করা হয়।(রেলওয়ে গ্যালারি পেইজের নিউজটি 'আজকের পত্রিকা' থেকে নেয়া)

সবকিছু সামলিয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়ে সালমা বেগম বলেন, ‘এখন আমি একজন কর্মজীবী নারী, একজন মা, একজন গৃহিণী, কারও বউ বা কারও মেয়ে। সেই সকালে আমরা বের হই। ফিরতে ফিরতে অনেক সময় রাত ১০টা কিংবা ১২ টায় হয়। সবচেয়ে বেশি বঞ্চিত হয় আমার দুই ছেলে।’

ছোট ছেলেটির জন্য কষ্ট হয় জানিয়ে সালমা বলেন, বাসা থেকে যখন বের হই খুব কষ্ট লাগে। কারণে দুধের শিশুটিকে রেখে বের হতে হয়। ট্রেন চালানোর অবসর সময় তাকে খুব মিস করি। এই জায়গাটি অনেক কষ্টের। তারপরও পরিবারের জন্য সাপোর্ট প্রয়োজন। আমার টাকা দিয়ে সংসারের অর্ধেক কাজ চলে।’

এই পেশায় যারা আসতে চায় তাঁদের উদ্দেশে সালমা বলেন, এসব মানিয়ে নিতে পারলে যে কেউ আসতে পারে। সালমার বাড়ি নরসিংদী জেলায়। শ্বশুর-শাশুড়ি নিয়ে পাহাড়তলীতে থাকেন। তাঁর বাবাও রেলওয়েতে চাকরি করতেন।

আরেক সহকারী লোকোমাস্টার কোহিনুর আক্তার। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে অনার্স-মাস্টার্স শেষ করেন তিনি। তাঁর বাড়ি কুমিল্লায়। তিনিও ২০১১ সালে সহকারী লোকোমাস্টার হিসেবে যোগ দেন।

কোহিনুর আক্তার বলেন, এই পেশায় অনেক বাধা আছে। আমরা যখন ট্রেন চালায় তখন আমাদের লক্ষ্য করেই পাথর ছোড়ে। প্রথম প্রথম অনেক টিটকারি শুনতে হতো। এখন সবকিছু মানিয়ে নিয়েছি। রেলওয়ের এখানে যারা আছেন তারা অনেক সহযোগিতা করেন।

পূর্বাঞ্চলের প্রধান যান্ত্রিক প্রকৌশলী বোরহান উদ্দিন বলেন, ‘নারী চালকদের সুবিধা-অসুবিধাগুলো বিশেষভাবে দেখা হয়। নিজেই সরাসরি তদারকি করি। কোনো সমস্যা বা তাঁদের কিছু প্রয়োজন হলে তৎক্ষণাৎ সমাধান করে দিচ্ছি। নারী দিবসে তাঁদেরসহ প্রত্যেক কর্মজীবী নারীকে বিশেষ শ্রদ্ধা জানাই। তাদের সম্মান করি।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ