সর্বশেষ খবর

10/recent/ticker-posts

নির্মাণ হয়েছে সেতু, তবুও দু্র্ভোগ কমেনি, ভোগান্তি চরমে।।BDNews.in

কুমারখালী উপজেলার পান্টি - বাঁশগ্রাম সড়কের কাঁচিকাটা নামক সেতু এলাকায় কাঁদায় আটকে আছে গাড়ি, ধাক্কা দিয়ে তোলা হচ্ছে।

গোলাম সরোয়ার, কুমারখালী প্রতিনিধিঃ কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে সেতু নির্মাণের পর ইট, পাথর ও বালুর বদলে শুধু মাটি দিয়ে সংযোগ সড়ক সংস্কার করা হয়েছে। মাটিতে বৃষ্টির পানি জমে সৃষ্টি হয়েছে কাঁদামাটি। কাঁদায় আটকা পড়ছে মানুষ ও মালবাহী যানবাহন গুলো। আবার কখনও সড়ক ও সেতুর ওপর উল্টে পড়ছে যানবাহন। 

এতে প্রতিদিনই আহত হচ্ছেন পথচারীরা, যানযট সৃষ্টিসহ চলাচলে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন মানুষ। এমন দুর্ভোগের চিত্র উপজেলার পান্টি - বাঁশগ্রাম বাজার সড়কের চাঁদপুর ইউনিয়নের  কাঁচিকাটা নামক সেতু এলাকায়। 

স্থানীয় চেয়ারম্যান ও পথচারীরা অভিযোগ করে বলেন, ইট পাথরের বদলে মাটি দিয়ে দায়সারা কাজ করেছে ঠিকাদার ও প্রকৌশলী কার্যালয়। কাজে নানান অনিয়ম রয়েছে। জনদুর্ভোগ চরম পর্যায়ে পৌছেছে। তবে প্রকৌশলী বলছেন, সেতু নির্মাণে সড়ক সংস্কার ব্যয় ধরা ছিলোনা। ফলে এমন ভোগান্তি সৃষ্টি হয়েছে। মোবাইল টিমের মাধ্যমে সংস্কার করা হবে।

গতকাল শুক্রবার বেলা ১২ টার দিকে সেতু এলাকায় সরেজমিন দেখা যায়, সেতুর ওপর ও সেতুর দুই পাশে কাঁদামাটি সৃষ্টি হয়েছে। জমে আছে বৃষ্টির পানি। সৃষ্টি হয়েছে গর্ত। পথচারীরা যানবাহন থেকে নেমে পাঁয়ে হেটে চলাচল করছে। মালবাহী প্রতিটি যানববাহন সেতুর পশ্চিম পাশের কাঁদামাটিতে আটকা পড়ছে। স্থানীয় মানুষ ও পথচারীরা আটকে পড়া যানববাহন গুলো ধাক্কা দিয়ে পাড় করছে। এসময় আটকে পড়া একটি মালবাহী করিমন গাড়িকে তুলতে অপর একটি সেলোইঞ্জিন চালিত গাড়ি লাটাহাম্বাকে ধাক্কা দেওয়ার দৃশ্যও দেখা যায়।

এলাকাবাসী সুত্রে জানা গেছে, উপজেলার চাদপুর, বাগুলাট ও পান্টি ইউনিয়নের প্রায় লাখো মানুষ চলাচল করে এই সড়ক দিয়ে। এছাড়াও পার্শ্ববর্তি ঝিনাইদহ জেলার শৈলকূপা উপজেলার একাংশ কুষ্টিয়া শহরের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে এই সড়ক দিয়ে। ফলে সড়কটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ যাতায়াতকারীদের কাছে। 

প্রায় ছয়মাস আগে সড়কের কাঁচিকাটা নামক স্থানের সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ করেছে ঠিকাদার ও প্রকৌশলী কার্যালয়। কিন্তু সংযোগ সড়ক সংস্কার করেছে মাটি দিয়ে। সেই মাটিতে বৃষ্টির পানি জমে কাঁদা সৃষ্টি হয়েছে। কাঁদায় যানবাহন আটকে যাচ্ছে, যানবাহন উল্টে দুর্ঘটনা ঘটছে, মানুষ আহত হচ্ছে, যানবাহন ও মালামাল নষ্ট। চরম ভোগান্তিতে চলাচল করছে মানুষ। কিন্তু কারো কোনো নজর নেই।

কুমারখালী উপজেলার পান্টি - বাঁশগ্রাম সড়কের কাঁচিকাটা নামক সেতু এলাকায় কাঁদায় আটকে আছে গাড়ি।

উপজেলা প্রকৌশলী কার্যালয়ে সুত্রে জানা গেছে, উপজেলাধীন পান্টি বাজার আরএইচডি সড়ক  হইতে বাঁশগ্রাম বাজার জিসি সড়কের ৩ হাজার ৮০০ মিটার চেইনেজে ( কাঁচিকাটা সেতু নামক স্থান) তিন মিটার দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের বক্স সেতুর (কালভার্ট) অনুমোদন দেয় এলজিইডি। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১৮ লক্ষ ১২ হাজার ১৯৫ টাকা (চুক্তিমূল্যে)। সেতু নির্মাণের ঠিকাদার ছিলেন জেলার ভেড়ামারা উপজেলার ফারাকপুরের মোঃ নজরুল ইসলাম। প্রায় ৬ মাস আগে সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ করেছে ঠিকাদার। কিন্তু সেতু নির্মাণ ব্যয়ের সাথে সংযোগ সড়কের ব্যয় ধরা ছিলোনা। সেজন্য বালু, মাটি ও কিছু ইটের খোঁয়া দিয়ে সড়ক সংস্কার করা হয়।

কাঁচিকাটা সেতুর পাশে বাস করেন রাজিবুল ইসলাম। তিনি স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র। তিনি বলেন, ' ইটের বদলে মাটি দিয়ে রাস্তা বানায়ছে। এখন বৃষ্টির পানিতে কাঁদামাটি তৈরি হয়ে চরম ভোগান্তি হচ্ছে মানুষের। প্রায় ৬মাস ধরে চলছে এদুর্ভোগ।'

সড়ক দিয়ে চলাচলকারি করিমন গাড়ি চালক মহব্বত আলী বলেন, ' পান্টি বাজার থেকে পিয়াজ বোঝায় দিয়ে সদরে যাচ্ছি। পাকা সেতুর কাঁদায় গাড়ি আটকে গেছে। ১০/১২ মিলে গাড়ি তুলেছি। খুব সমস্যা হচ্ছে মানুষের।'

আরেক করিমন গাড়ি চালক ইসমাইল বলেন, ' শহর থেকে মাল কিনে পান্টি বাজারে যাব। কিন্তু সেতু এলাকায় গর্তে গাড়ি আটকে গেছে। আরেক গাড়ি দিয়ে ধাক্কা দিয়েও তুলতে পারিনি। প্রায় ২০ মিনিট চেষ্টা করে স্থানীয় কয়েকজন ও পথচারীদের সাহায্য নিয়ে গাড়ি তুলেছি। রাস্তাটি দ্রুত ঠিক করা দরকার।'

এবিষয়ে জানতে কাজের ঠিকাদার নজরুল ইসলাম মুঠোফোনে কলা দেওয়া হয়। কিন্তু তিনি কলটি রিসিভ না করায় তাঁর বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। '

চাদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাশেদুজ্জামান তুষার বলেন, ' কে কবে কোথায় কি কাজ করে তা ঠিকাদার ও প্রকৌশলী কেউ আমাকে জানায় না। পাকা সড়ক ও পাকা সেতুতে কাঁদামাটি সৃষ্টি হয় কিভাবে তা আমার মাথায় ঢোকেনা। কাজে অনিয়ম রয়েছে। জনগণের ফোন পেয়ে কাঁচিকাটা সেতুতে গিয়েছিলাম। চরম জনদুর্ভোগ সেখানে। প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি আমি।'

উপজেলা প্রকৌশলী মো. আব্দুর রহিম বলেন, ' অনেক আগেই সেতুর কাজ শেষ হয়েছে। কিন্তু সেতু নির্মাণ ব্যয়ের সাথে সংযোগ সড়ক নির্মাণ ব্যয় ধরা ছিলোনা। ফলে সংযোগ সড়ক সংস্কারে মাটি ব্যবহৃত হয়েছে। এতে চলাচলে চরম ভোগান্তি সৃষ্টি হচ্ছে বলে জানতে পেরেছি।'

তিনি আরো বলেন, ' জনদুর্ভোগের বিষয়টি জেলা প্রকৌশলী স্যারকে জানানো হয়েছে। মোবাইল টিমের মাধ্যমে সংযোগ সড়ক সংস্কার করা হবে ।'

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ