রংপুর নগরীর পার্কের মোড় এলাকার বাসিন্দা কেয়া তালুকদারের জন্ম রংপুর শহরেই। ২ ভাই ১ বোনের মধ্যে মেজো তিনি। কেয়া তালুকদার কারমাইকেল কলেজ থেকে প্রাণীবিদ্যায় স্নাতকোত্তর, ২য় বারের মতন চাকরীকারীন সময়ে ঢাকা বিআইএইচআরএম থেকে এমবিএ এবং ৩য় বার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাষ্টার্স অফ ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করেন তিনি।
সংসারের প্রয়োজনে ২০০০ সালে একটি আন্তর্জাতিক এনজিওতে চাকুরী জীবন শুরু করেন। ১৫ বছরে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক এনজিওতে বিভিন্ন উচ্চ পদে চাকুরী করেন। এর মধ্যে হঠাৎ করে ২০১৬ সালে প্রকল্প শেষ হলে বেকার হয়ে যান তিনি। দুই বছর বিভিন্ন এনজিওতে চাকুরীর পরিক্ষা দিতে থাকেন। পরে চাকুরীর আশা ছেড়ে দিয়ে হেঁসেল চাইনিজ রেষ্টুরেন্ট নামে রেষ্টুরেন্ট ব্যবসা শুরু করেন তিনি। রেষ্টুরেন্টটি ভালোই চলতে থাকে। তবে এবার হানা দেয় করোনা মহামারি। বন্ধ হয়ে যায় রেষ্টুরেন্ট ব্যবসা। আবারো বেকার ঘরবন্দি জীবন।
করোনাকালীন সময়ে ঘরে বসে রসুনের আচার বানিয়ে শখের বসে ফেসবুকে আপলোড দেন তিনি। আর তাতেই বাজিমাত। এতে ব্যাপক সাড়া পরে। একের পর এক অর্ডার আসতে থাকে। সেই শখ থেকেই শুরু হয় বানিজ্যিকভাবে আচার তৈরী। অনলাইনে কেউ অর্ডার করলেই তার ঠিকানায় কুরিয়ারের মাধ্যমে পাঠান তিনি।
কেয়া তালুকদার নিজ হাতে আচার তৈরীর কাঁচামাল ক্রয় করেন এবং নিজ হাতেই তৈরী করেন আচার, নিজ হাতেই সময় মতো প্যাকেটিংয়ের কাজটাও করেন তিনি। এভাবেই হেঁসেল হোম ডেলিভারীর মাধ্যমে তিনি আচার বিপনন করার কাজটি করছেন।
এখন তিনি দেশী রসুন ও বোম্বে রসুনের আচার, বোম্বে মরিচ, মরিচ তেঁতুল মিক্সড, তেঁতুল রসুন মিক্সড, মিক্সড ভেজিটেবল, জলপাই, বড়ই, তেঁতুল, চালতা, আম, কামরাঙা, আমড়া, লেবু, আমলকী, আম খেঁজুর তেঁতুল মিক্সডের আচার তৈরী করেন। এছাড়াও যে কোনো ধরণের আচার অর্ডার করলে বানিয়ে দেন তিনি।
কেয়া তালুকদার ২০১৯ সাল থেকে ফুডপান্ডার মাধ্যমে অনলাইনে ব্যাবসা করছেন। চিকেন মোমোস, চটপটি, পাস্তা, চাউমিন, নুডুলস, রেড সস পাস্তা, আলু, ডিম চপ, চিকেন কাবাব, খিচুড়ি, চিকেন ফ্রাই, চিকেন বিরিয়ানি, ফ্রাইড রাইচ, বারবিকিউ চিকেন এবং বিভিন্ন ধরণের আচার মেন্যুর অন্তর্ভূক্ত।
আচার ছাড়াও তিনি পাবনার ঐতিহ্যবাহী গাওয়া ঘি, সুন্দরবনের চাকের মধু, রংপুরের ঐতিহ্যবাহী খাবার সিঁদল, খেঁজুরের পাটালি গুড়, খাঁটি সরিষার তেল অনলাইনে বিক্রি করেন।
সবমিলিয়ে এখন কেয়া তালুকদার প্রতি মাসে আড়াই থেকে তিন লাখ টাকার আচার বিক্রি হয়। এতে ৫০ থেকে ৭০ হাজার টাকা আয় তার।
কেয়া তালুকদার বিএসটিআই এর অনুমোদনের প্রক্রিয়া সম্পুন্ন করে অনলাইনে আচার বিক্রির পাশাপাশি বাজারে প্যাকেটজাত আচার বাজারজাতের দিকে মনোযোগী।
কেয়া তালুকদার ব্যক্তি জীবনে লেখালেখির সাথে জড়িত। তিনি ২০০০ থেকে লেখালেখি করেন। ইতিমধ্যে তার ৪ টি বই প্রকাশিত হয়েছে। তার প্রকাশিত প্রবন্ধের বই ‘দাসী না দেবী’ বইটি গত ২০২২ সালে বেগম রোকেয়া দিবসে, বেগম রোকেয়া নারী সংগঠন থেকে প্রবন্ধ ক্যাটাগরীতে সম্মাননা পেয়েছে। তিনি লেখালেখির জন্য অনেক সম্মাননা পেয়েছেন।
রংপুর মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ড্রাষ্ট্রিজের প্রেসিডেন্ট রেজাউল ইসলাম মিলন জানান, উদ্যোক্তাদের এগিয়ে নিতে যে কোন বিষয়ে পরামর্শ কিংবা সহযোগিতা রংপুর মেট্রোপলিটন চেম্বার করে থাকে। কেয়া তালুকদার কোন বিষয়ে সহযোগিতা চাইলে আমরা আন্তরিকভাবে সহযোগিতা করবো।
কেয়া তালুকদার বলেন, একেবারে হতাশা থেকে অনলাইনে আচার বিক্রি শুরু করে আজ আমি স্বাবলম্বি উদ্যোক্তা। নারী বলতে শুধু স্বামীর সংসারে রান্নার কাজ করবে তা ঠিক না। বরং পরিবারের প্রয়োজনে বিভিন্নভাবে আয় করা সম্ভব। যা পরিবার, দেশের উন্নয়নে কাজে দেয়। তিনি আরো বলেন, অনলাইনে আমার আচার বিক্রি দেখে অনেকেই পরামর্শ চেয়েছেন, আমি তাদের পরামর্শ দিয়েছি। পরামর্শ নিয়ে কসমেটিকসসহ বিভিন্ন ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত হয়ে তারাও স্বাবলম্বী হয়েছে। আমি চাই কোন নারী যেন বেকার না থাকে। সবাই স্বাবলম্বী হউক। এটাই প্রত্যাশা করেন।
0 মন্তব্যসমূহ