ঠিক এই অভিজ্ঞতার আলোকেই আমরা দেখে আসছি ও দেখি যুগের পর যুগ সমাজে মেয়েদের নিচু বা অবহেলার চোখে দেখা হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। তাই চিরাচরিত নিয়মানুসারে আমাদের দেশে এখনও ড্রাইভারের বাম সাইডে সামান্য গুটিকয় আড়া-আড়ি সিট বাসের মধ্যে মেয়েদের জন্য বরাদ্দ থাকে। স্থায়ীত্ব দেওয়া হয়েছে, যা মেয়েদের জন্য মারাত্মক ক্ষতির। আবার উঁচু মতো সেখানে উঠাও ঝুঁকির, বৃদ্ধা হলে, সন্তান সম্ভবা মহিলা হলে- বা যে কোন মেয়েদের জন্য। তাই এটা একটা অমানবিক। যেখানে সিট মেয়েদের জন্য এক তৃতীয়াংশ ভাগ থাকা জরুরী। সংসারের ধকল সামলিয়েও এখন মেয়েরা কেউ ঘরে বসে নেই।
এখানে আমি আরেকটা কথা বলতে চাই। এই যে শহরের রাস্তাগুলোতে এক একটা কার- মাইক্রো গাড়িতে মাত্র একজন ব্যক্তি চলাচল করে। এটাও কিন্তু যানযটের উৎস্য। কেননা অনেকখানি রাস্তার জায়গা একজনে জুড়ে বসেন। ৩ জনকে নিয়ে ৩টা কার গাড়ি- একটা বাসের সমান জায়গা দখল করে বটে। যেখানে বাসে মিনিমাম ৫০জন থাকে। এই দিকটার একটা ভালো সমাধান আশাকরি ভবিষ্যতে হবে। হওয়া দরকার। কেননা টাকাধারীর থেকে বিশেষ কিছু জ্ঞানীগুনি মেধাবীর সময়ের মূল্যই কিন্তু বেশি। নিশ্চিত জীবিনের মূল্যও তাদের বেশি। কিন্তু শুধু টাকার গরমেই তাদের জীবন মান পাথর্ক্যওে, তাই দামী সম্মানীত হয়েও তারা সাধারণ মানুষের সাথে এই সমস্ত বাসেই যাতায়াত করেন।
আপডেট যুগে সেই দিকটা বিচেনায় আনা উচিত বলে আমি মনে করি। কাজেই টাকা হলেই হজ্জ করতে পারবে যোগ্যতা সম্পন্ন না হলেও, সেই রকম- টাকার জোরে সম্মানিত ব্যক্তির ভুগোনো, এর নাম গণতান্ত্রিক স্বাধীনতার দেশ নয়। যেজন্য যার তার একক গাড়ির পারমিশন না থাকলেও রাস্তার পরিবেশ ভালো থাকবে বলে মনে হয়। একক গাড়ি থাকবে গুরুত্বপূর্ণ কিছু ব্যক্তির বিশেষ যোগ্যতা বলে।
আমাদের দেশের উন্নয়ন উন্নতির স্বার্থে নারী পুরুষ সবারই সময়ের এবং স্বাস্থ্যের প্রতি নজর রাখতে হবে। যেহেতু এখন সরকারী, বেসরকারী, এনজিও, স¦ায়ত্ত্বশাসিত অন্যান্য নানান সংস্থা যেমন ব্যাংক, বীমা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসার শাখা প্রশাখা, ইউনিভার্সিটি, ব্যক্তিগত অফিস, প্রিণ্ট, পাবলিকেশন্স এন্ড ইলেকট্রনিক মিডিয়া, মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানী, গ্রুপ কোম্পানী, বায়িং হাউজ, গার্মেন্টস ফ্যাক্টরী, হাসপাতাল, ইঞ্জনিয়ারিং বা আর্কিটেক ফার্ম, সাহিত্য সংস্কৃতিক একাডেমী, অভিনয় জগত প্রভৃতিতে মেয়েদের প্রাধান্য ক্রমাগত বাড়ছে।
গত বছরেও রূপালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ অফিসার, সিনিয়র অফিসার বা কর্মচারী পর্যায়ে পুরুষের চেয়ে মেয়েদেরই বেশি নিয়োগ দিয়েছে। কেজি নার্সারী থেকে সরকারী প্রাথমিক, মাধ্যমিক, স্কুল কলেজÑবিশ্ববিদ্যালয়ে মেয়ে শিক্ষক অনেক বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছেলেদের হারে মেয়েরা কম নয়। রাস্তা ঘাট মেরামত, ইট সুরকি ভাঙা, বড় বড় বিল্ডিং এর কাজে আজকাল ছেলেদের পাশাপাশি মেয়েদের অবস্থান কোন অংশে পিছিয়ে নেই।
এভাবে পথের ধারে পিঠা বানানো থেকে কাঁচা তরকারির হাটে, মাছ মাংসের বাজাওে, পান-সিগারেটের দোকানে, মার্কেটগুলোতে মার্কেটের মালিক হওয়া, দোকানী হওয়া, বই বিক্রি করা বা প্রকাশক পর্যায়ে অনেক কিছুরই পরিচালনার ভূমিকায় মেয়েরা বেশ জোট বেঁধে ব্যবসা বাণিজ্য সামলাচ্ছে। মালিক পর্যায় থেকে বেচা-কেনার কাজ লাজ ভয় দ্বিধা মুক্তভাবে করছে।
রাজনৈতিক আঙিনায় মেয়ে কর্মি কম নেই। গত ৩০ উর্ধ্ব বছর একাধারে প্রধানমন্ত্রীর আসনে নারীই রয়েছেন। ১৯৯১ হতে ২০২৪ইং ৩৩বছরে পড়েছে, এর মধ্যে মাত্র ২বছর ছিল তত্তাবধায়ক সরকার। নারী এমপি মন্ত্রীর সংখ্যাও কম নয়, আগামীতে আরো বাড়বে ইনশাল্লাহ।
গার্মেন্টস এর শ্রমিক কর্মী মেয়েরা নি:সন্দেহে সিংহভাগ। তাহলে কেন মেয়েদের মাত্র ৬/৯টি সিট বরাদ্দ হবে? তাও ড্রাইভারের ওদিকের আড়াআড়ি সিটে। ঝুঁকি নিয়ে যেখানে বসেও থাকতে হবে হেলান না দিয়ে। আর দেখা যাচ্ছে হেলান দিয়ে ইয়াং ছেলেগুলো ঘুমাচ্ছে। তাহলে ছেলেরা বাড়িতেও সুখ করে, বাইরে বাসের মধ্যেও ঘুমাই। মেয়েরা-মায়েরা বাড়িও রান্নাবান্না ইত্যাদির ধকল সামলিয়ে আসেন। এসে বাসের মধ্যেও হেলান না দিয়ে, না ঘুমিয়ে, সারাপথ সজাগ থাকেন। আসলে বললে ভুল হবে না, পুরুষ বাবা মায়ের জমি জায়গা ও সমাজের সুযোগ সুবিধা বেশি নিয়ে, বেশি সুখ করতে করতে লোভ হয়ে গেছে।
প্রকৃতই মেয়েদের বাসে এক তৃতীয়াংশ সিট এবং লম্বালম্বি চেয়ার সিট হলে দেশ এবং সমাজের জন্য মঙ্গল। শিক্ষা যেমন জাতির মেরুদন্ড, সংসারের মেরুদন্ডও ঘরের মা, বউ, কন্যা, জায়া, ভগ্নি। তারা অসুস্থ থাকলে সংসারে কোনদিনও উন্নতি হবেনা। চিরজীবন অশান্তির আগুনে তিল তিল করে পুড়ে ছায় হতে হয়। অন্তর জ্বালায় জ্বলে, চাকুরিজীবি যোগ্য পুরুষ হলেও সন্তানেরা অসুস্থ মাকে নিয়ে ভোগে। নচেৎ অসুস্থ ভাবীকে নিয়ে দেবর, ননদ কষ্টে ভাসে, কাঁদে। অসুস্থ কন্যাকে নিয়ে বাবা মা, চাচা, ফুপু অস্বস্থিতে সময় পার করেন ইত্যাদি। আয় রোজগারের অর্থ বেশির ভাগ চিকিৎসা পথে ব্যয় হয়। কাজেই সুস্থ জীবন যাপনের জন্য সতর্ক হলে ক্ষতি কি? ক্ষতি তো নাই।
শুধু লাগবে মেয়েদের প্রতি ছেলেদের একটু সহানুভূতি, সহমর্মিতা, সহযোগিতা। এতে থাকবে সংসারের সবাই মিলে- সুখ সমৃদ্ধিসহ মহাশান্তিতে।
এখন এর কারণ বিশ্লেষণ তথা উপায়টা শুনি? নিশ্চয় অজানা নয় যে, মেয়েদের শরীরই নয় মেরুদন্ড এবং কোমর ছেলেদের তুলনায় দূর্বল ও নরম। তাদের হাড়গুলোও চিকন। তারা যখন মা হয় মেরুদন্ডের হাড় সম্পূর্ণ দুর্বল হয়ে পড়ে। কারণ এই চিকন হাড়ের ওপর একাধারে বাচ্চার ওয়েটটাকে ধারণ করতে হয়। তারপর এদিকে বাসের মধ্যেও আড়াআড়ি সিটে বসলে মেয়েদের জন্য মারাত্মক ক্ষত্।ি সমস্ত চাপ এবং ঝুঁকি কোমরের বা মেরুদন্ডের হাড়ের ওপর ভর করা থেকে। প্রথমে এই মেরুদন্ডের ক্ষয়রোগ সৃষ্টি হয়, যা একবার হলে কোনদিনও পুরাপুরি সারেনা, ঠিক ডায়াবেটিস প্রেশার যেমন মরণব্যধি সারা জীবনের ঘাতক, তেমন হয়েই দাঁড়ায়।
অসুস্থ্য হলে তখন সারাজীবন তার ঐ সিটে না বসা ছাড়াও বহু নীতি মালা-মেনে চলতে হয়। না মানলে সেটা জার্নিকালে হয় তার জন্য ভয়াবহ। কাজেই আগে থেকে সাবধান থাকলে মেয়েরা এ রোগের ঝুঁকি হতে পরিত্রাণ পেতে পারে। সেটা জার্নিকালে সাধারণ ইজি সিটে বসলে ওয়েস্টের ওপরে চাপ পড়ে কম। তখন তত পরিমাণে ক্ষতি করতে পারে না। যাবত জীবন ভিটামিন-ক্যলসিয়াম ট্যাবলেট খেয়ে বাঁধা নিয়মে চলার চেয়ে, সাবধান থেকে সুখী ও সমৃদ্ধিশালী জীবন পাওয়া নিশ্চয়ই বহুগুণে সবারই ভাল।
পৃথিবীতে নারী-পুরুষ আল্লাহর আমানত। প্রকৃতির মেল বন্ধনে সেই আমানতের খেয়ানত না হওয়া মানেই সমাজে সকলেই ভালো থাকা। এই ভালো থাকতে, ভালো রাখতে কিছু কিছু দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টানো অপরিহার্য। অর্থাৎ পরিবর্তন আনা জরুরী। শুধু অর্থনৈতিক নয়, সামাজিক, মানসিক এবং পারিপার্শ্বিক।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং সমস্যা সর্বসম্মতিক্রমে মোকাবেলা করার মতো একটি বিষয়। কিন্তু পূর্বেও যা বলেছি পুরুষ যদি নারীর কনসিডার না করে, সেটা মেলানো কখনো সম্ভব না। তাই আসুন আমরা এবার ২০২৪ ভাষার মাসের সম্মানার্থে, এই ভালো কাজটায় প্রতিষ্ঠা করি। ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপনে এই আহবান জাতির কল্যাণে নিবেদন করি। একে অপরের প্রতি তুলে ধরি।
যেহেতু এখন নারীরও ব্যস্ততম জীবন। নারীও তো মানুষ। তাই আপডেট সমাজে নি¤œ ও সাধারণ থেকে বুদ্ধিমতী জ্ঞানী-গুণী সচেতন কোন নারীই চাননা তাদের কোমরের হাড় ক্ষয় হওয়া এই ক্ষতি। সাথে তারা আরো চান যে, বাসের কোন ক›্ডাক্টর-হেল্পার আর না বলুক, মহিলা সিট নাই, মহিলা উঠবেন না। তারা চান বরং বলুক, পুরুষ সিট নাই, পুরুষ উঠবেন না।
কলমে- সৈয়দা রাশিদা বারী
0 মন্তব্যসমূহ