আমাদের উপলব্ধি কমে গেছে যে এগুলো সাথে করে নিয়ে গেলে কবরে ঘাতানীই হবে – প্রশান্তি কিছু হবে না। ছোটবেলায় খুব আনন্দের সাথে শবএ বরাত পালন করতাম। ডালের হালুয়া, সুজির হালুয়া, রুটি, মাংস কত কিছুর আয়োজন থাকত বাড়িতে। প্রতিবেশি, ভাই-বোন, বন্ধু-বান্ধব নিয়ে চলত সারা রাত জেগে নামাজ পড়া আর ক্ষিদে পেলে যার যা ইচ্ছা খাওয়া। আমাদের বাড়িতে এ আয়োজন বেশিই হত। প্রতিবেশি ছোট বোনগুলোকে নিয়ে থাকত একটা উৎসব উৎসব ভাব --- আল্লাহর নৈকট্য লাভের উৎসব। যখন মাধ্যমিক লেবেলে এলাম তখন থেকে নফল নামায আদায় না করে প্রতিদিনের ধরে ২০ রাকাত করে কাযা নামাজ আদায় করতাম যতদিনের সম্ভব হত।
ঘরে আগর বাতি জ্বালিয়ে একটা পবিত্রতা আর সুগন্ধির আমেজ আনা হত। ভাই- বন্ধুগুলো মসজিদ, গোরস্থান ঘুরে এসে খাওয়া-দাওয়া করে আবার চলে যেত নামাজে। কিছুদিন যুক্তি দেয়া হল এদিনে হালুয়া রুটি করার কোন নিয়ম নাই। কেননা সারাদিন এত পরিশ্রম করে রাতে নামাযে আলস্য আসে। আর বর্তমানে বলা হয় এ দিনটার নামায রোযারও কোন দলিল নাই। তাহলে আগের দিনের হুজুর বা আলেমগণ কোন শিক্ষায় শিক্ষিত ছিলেন আর বর্তমানের হুজুর বা আলেমগণ কোন শিক্ষায়? আমি কিন্তু একটা কঠিন সত্য উপলব্ধি করেছি যে, হুজুর আর ডাক্তার কেউ কারো প্রেসক্রিপশন গ্রহণ করেন না। আমার কথা হল সে আয়োজনে ধার্মিকতা উজ্জিবিত করা, সৌহার্দতা, হৃদ্যতা, আতিথেয়তা ছিল।
সারাদিন পরিশ্রম করে কই ক্লান্তিতো আসেনি বরং সবাইকে নিয়ে নামাজ আদায় করা আরো সহজ হয়েছে। হৃদ্যতা বাড়ছে না বলেই তো দিন দিন আমাদের হিংস্রতা, পশুত্ব বেড়েই চলেছে। দলিল যদি না ই থাকে, না থাকুক -- বাড়তি ইবাদতের জন্য, গরীব, মিসকিনদের খাওয়ানোর জন্য পূণ্য তো লাভ হচ্ছে, ক্ষতিতো কিছু হচ্ছে না। বর্তমানে আমরা আত্মকেন্দ্রিক আর কঞ্জুস হয়ে যাচ্ছি যার ফলে আতিথেয়তাকে দূরে সরানোর জন্য উল্টা পাল্টা যুক্তি দেখাই। এই যেমন প্রতিদিনের নামাজের ২০ টি ফরযের দিকে খেয়াল না রেখে রমজানে না খেয়ে থেকে মাত্র ২টি ফরজ আদায়ে তৎপর হই। এটা মুসলিম হিসেবে আমাদের কাছে কতটা গর্বের?
0 মন্তব্যসমূহ