প্রিপারেশন একেবারে খারাপ ছিলো না। অলরেডি একটা সরকারি প্রতিষ্ঠানে ভালো একটা চাকরিও পেয়ে গেলাম ৩৭ এর প্রিপারেশন দিয়ে। কিন্তু বিসিএস প্রিলি ফেইল করলাম।
মাস্টার্স করলাম। এরপর ৩৮, ৪০ খুব একটা পড়াশোনা করতে পারি নাই। ফলাফল প্রিলি ফেইল। টানা তিন প্রিলি ফেইল করে বিসিএস এর স্বপ্ন দেখা প্রায় বাদই দিয়ে দিয়েছিলাম।
এরপর করোনা এলো। জীবনের সবকিছু ম্যাসাকার করে দিলো। নিজের সর্বনিকৃষ্ট পরিস্থিতিতে পড়লাম। বলা যায় দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলো। মনে হলো পড়াশোনা ছাড়া ঘুরে দাড়ানোর আর কোন রাস্তা নাই।
সিরিয়াসলি পড়াশোনা শুরু করলাম। প্রস্তুতির শুরুর দিকেই ৪১ প্রিলি এটেন্ড করলাম। সামান্য মার্জিনে প্রিলি ফেইল করলাম।
টানা চার প্রিলি ফেইল করে নিজেকে রবার্ট ব্রুস মনে হতে লাগলো। পড়াশোনার মাত্রা আরও বাড়ালাম। অফিস বাসে পড়া শুরু করলাম। লাঞ্চ পিরিয়ডে গ্রুপ স্টাডি করতাম কলিগদের সাথে। ডানে বামে যে যেখানে ছিলো সবাইকে নিয়ে পড়া শুরু করলাম। অফিস কলিগ, ছোট ভাই, ছোট বোন, বউ, বাচ্চা, বাসের কলিগ, সিনিয়র স্যার-ম্যাডাম, অফিসের লাইব্রেরির ভাই, বাসের ড্রাইভার ভাই, সবাই নানাভাবে আমার পড়ার মধ্যে যুক্ত ছিলো! পড়াশোনা ছাড়া কারো সাথে কোন বিষয়ে আমার সম্পর্ক ছিলো না, এমন অবস্থা!
আলহামদুলিল্লাহ পঞ্চমবার পরীক্ষা দিয়ে ৪৩ প্রিলি পাস করলাম। ষষ্ঠবারে ৪৪ প্রিলি পাস করলাম। সপ্তমবারে ৪৫ প্রিলি পাস করলাম। বিসিএস প্রিলি পাস করাই আমার জীবনের সবচেয়ে বড়ো যুদ্ধ ছিলো।
রিটেন পরীক্ষায় আমি সবসময়ই ভালো করতাম। আলহামদুলিল্লাহ ৪৩ রিটেন হেসে খেলে পাস করলাম। ভাইভা বোর্ডে চেয়ারম্যান স্যার এই পঞ্চমবারে প্রিলি পাসের প্রশ্ন তুলেছিলেন। সুন্দর মতো জীবনের গল্প শুনিয়ে দিলাম!
৪৩ এর ফাইনাল রেজাল্ট হলো। আলহামদুলিল্লাহ, সবার দোয়ায় বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত।
এদিকে বিসিএস প্রিপারেশন নিতে গিয়ে বাংলাদেশ বিমান, সোনালী ব্যাংক আর বাংলাদেশ ব্যাংকে লোভনীয় চাকরি করার সুযোগ হয়েছে, আলহামদুলিল্লাহ।
তাই, হাল ছেড়ো না বন্ধু। শেষ দিন পর্যন্ত লড়ো। নিজের উপর বিশ্বাস রাখো। সাফল্য আসবেই ইনশাআল্লাহ।
শিমুল খালিদ
সহকারী পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংক
সাবেক সিনিয়র অফিসার, সোনালী ব্যাংক পিএলসি
সাবেক জিএসএ, পিসিএ, বাংলাদেশ বিমান
৪৩ বিসিএস প্রশাসন ক্যাডার (সুপারিশপ্রাপ্ত)।
সূত্রঃ প্রথম পাতা
0 মন্তব্যসমূহ