বিক্রি বা সেলের ক্ষেত্রেই নারীরা সম্পূর্ণ বঞ্চিত, তাছাড়া কোরবানির পশু লালন পালনে অংশ নারীদেরই বেশি। সাধারণত বাংলাদেশের ৬৪টি জেলার সবগুলো পশুহাটে, প্রতিবছর কোরবানির সিজনে, রমরমা ব্যবসা হয়। এদেশের অর্থ খাতের উন্নয়নে অন্তত পুরুষের পাশে নারীরও একটা ভূমিকা থাকতে পারে। আর নিশ্চয়ই সেটা থাকলে, মন্দ হয় না।
আমার চেনা কয়েকটি পশু বা গরুর হাটের নাম—
১. পাংশা পশু হাট, রাজবাড়ী জেলা।
২.আলমডাঙ্গা পশু হাট, চুয়াডাঙ্গা জেলা।
৩.ঝিনাইদহ পশু হাট— ঝিনাইদহ জেলা।
৪. যশোর পশু হাট— যশোর জেলা।
৫. আলাউদ্দিন নগর পশু বা গরুর হাট— কুমারখালী থানা, কুষ্টিয়া জেলা।
৬. বানিয়াপাড়া পশু বা গরুর হাট— কুষ্টিয়া সদর উপজেলা, কুষ্টিয়া জেলা।
৭. বাথলী পশু বা গরুর হাট— মানিকগঞ্জ জেলা।
৮. গাবতলী পশু বা গরুর হাট— ঢাকা জেলা।
একটু সামান্য তদন্তে নেমে দেখতেছি যে ১০৬ বছর বয়সী পশু হাটেরও হদিস আছে। কিন্তু কোন হাটের কোথাও নারীর কোন স্থান স্পেইস নেই! আমি এখন সেই রাজধানী ঢাকার সবচেয়ে বড় এবং একমাত্র স্থায়ী, পশুর হাটের সামান্য বিবরণ দিচ্ছি। যেটি পুরানো গাবতলিতে অবস্থিত। এই হাটের প্রতিষ্ঠাতা এবং উদ্বোধক জমিদারের নায়েব বিদ্যা অনুরাগী ও দানশীল ব্যক্তিত্ব, মুন্সি লাল মিয়া। তিনি ১৯১৭ সালে এখানে প্রথম পশুর হাট বসিয়ে ছিলেন। সেই সময়ে জমিদারদের মধ্যে হিন্দু বেশি ছিলো।
তাই হিন্দুর প্রভাব বেশি থাকায় গো হত্যা নিষেধ হয়। আমাদের কুষ্টিয়ার বিখ্যাত উপন্যাসিক, বিষাদ সিন্ধুর লেখক, মীর মোশাররফ হোসেন, তার গো জীবন রচনায় বুঝতে পারা যায়, মায়ার কারণে তিনিও গো হত্যার বিরুদ্ধে ছিলেন। তাই হুজুররা মৌলবাদরা আবার তার পিছনে লেগে ছিলো। যার ফলে তার কবরটাই বাস্তভিটাতে দিতে দেয়নি বা হয়নি।
হ্যাঁ ১৯৩১ সালে মিরপুর মাজার রোড ৩১.৯০ একর জমি ওয়াকফ করেন লাল মিয়া, জমিদারের একজন নায়েব। যদিও জমিটা ছিল জমিদারের। আসলে জমিদারি প্রথা ভাঙার আগে এবং পরে জমিদারের প্রভাব ছুটে গেলে যা হয়। তাই এ ধরনের বেশ কিছু কাজ হয়েছিল তখন নানা স্থানে, নানা কারণে।
ঐ জমি ওয়াকফ এর শর্ত ছিল প্রজন্মরা এই জমির আই ইনকাম খেতে পারবে কিন্তু বিক্রি করতে পারবেনা। পিছনে যাই থাক তবে এটা ছিল সুন্দর একটি উদ্যোগ। এই ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করেন ১৯৪১ সালে। তার দানকৃত জমিতে আছে তার মাজার, সাধারণের জন্য দান করা কবর স্থান, ৩টি মসজিদ, ঢাকা মানিকগঞ্জ মহাসড়ক, বাস স্টেশন এবং তার প্রতিষ্ঠিত দুধ মেহের দাতব্য চিকিৎসালয়, একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ওয়াকফ এস্টেটের অফিস এই বৃহৎ পশু হাট ইত্যাদি।
তখন পশু হাট থেকে প্রতি পশু বাবদ ৪আনা খাজনা নিয়ে মানুষের সেবায় ওই সমস্ত প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালনা হতো। হাট বসত সপ্তাহে ১দিন। আর বাংলাদেশে এই হাটের রাজস্ব আয় শুরু হয় স্বাধীনতার পর, ১৯৭৩ সালে। সেই ১৯৩১ সাল থেকে ইজারাদাররা ইজারা নিয়ে এই হাট পরিচালিত রেখেছে। এখানে গরু রাখার স্থানে, গরু বাধার বাঁশের আড় বানানো রয়েছে।
সব সময়ই তা মেরামত করা হয়। তবে কোরবানি ঈদের সামনে বাড়ানো হয়। গরু রাখতে ব্যাপারীদের গরু প্রতি বর্তমান ৮ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত দিতে হয়। বলা যায় এই হাটে কোরবানি ছাড়াও গরু ছাগল ভেড়া মহিষ সমানে সবসময় বিক্রি হয়। অন্তত নিম্নতম ৪০/৫০ টি তো অবশ্যই হয়। পশুর মধ্যে গরুর একটা ভালো ব্যবসা এই কুরবানির ঈদকে ঘিরে হয়।
তখন দুই এক সপ্তাহ ধরে, প্রায় প্রতিদিন একনাগারে অসংখ্য পশু,বলা চলে হাজারে হাজার বিক্রি বা সেল হয়। নারী—পুরুষের হাতে পালা পশু ছাড়াও এখানে আসে টাঙ্গাইলের সরকার ক্যাটেল ফার্ম থেকে ইন্ডিয়ান বলদ। তবে ভারত ও মিয়ানমার থেকে গরু আমদানি বন্ধ করা রয়েছে। তারপরও মাঝেমধ্যে দুই চারটা চোখে বাধছে। এবার বাংলাদেশের অধিকাংশ পশুহাটেই উঠেছে হলস্টেইন, ফ্রিজিয়ান, জার্সি ও থারপারকার জাতের গরু। সিন্ধি ও অস্ট্রেরিয়ান গরু সেভাবে দেখা যাচ্ছে না।
হ্যাঁ বাংলাদেশের সমস্ত পশুর হাটে, বর্তমান বাজার আকার ভেদে গরুর বিক্রয় হার গড়ে ৫৫ হাজার থেকে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত। হাট গুলোতে বর্তমানে সিকিউরিটি নিরাপত্তা ভালো দেওয়া হয়। পুলিশের সার্বিক সহযোগিতা সর্বক্ষণিক থাকে। প্রায় হাটে সেট করা হয়, জাল নোট ধরার, মানে ভুয়া টাকা সনাক্ত করার মেশিন। এই পশু হাটকে কেন্দ্র করে, গরুর খাবার, ডাল ছোলা ভুট্টা গম ভুষি খড় ছাল ঘাস ইত্যাদি বিক্রয় কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা হয়েছে। খুবই রমরমা ব্যবসা চলে। এবং মানুষের থাকা খাওয়ার আবাসিক গড়ে উঠেছে।
প্রচুর পরিমাণে টিউবওয়েল ও সাপ্লাই, পানি উঠাবার ডিপটি মেশিনের পানি সরবরাহর সুব্যবস্থা রয়েছে। এগুলো যারা ইজারা নেয়, হাট ডাকে, তারাই অতি দায়িত্বের সাথে পরিচালনা করে। কিন্তু দুঃখজনক যে সবই পুরুষের জন্য এবং সমস্ত ব্যবসায় এখানে পুরুষেরা করছে! সবারই জানা যে, আমাদের দেশ এখন সবকিছুতে বেশ এগিয়ে চলেছে। নারী শ্রমিকের হার আগের তুলনায় বেড়ে চলেছে। তারা আর এখন কেউ ঘরে বসে নেই।
নারী—পুরুষ বিভেদ একযোগে কাজ করছে দেশের উন্নয়নে। রাস্তায় মাটিকাটা, বালি টানা, খোয়া ভাঙ্গা, ইট ধোয়া, কালভার্ট বিল্ডিং এর প্লাস্টার করা, মাঠের নানা ফসলের কাজ করা থেকে, কোথাও বাদ নাই যে নারী শ্রমিক নাই। নারী শাসন শোষণ নির্যাতনের হার কমাতে, এদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধুর কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপদেশ এবং উৎসাহে, নারী শ্রমিকের স্থান সব সেক্টরে আছে ইনশাল্লাহ। ফার্ম করে পশু পালনেও আছে, নারীর অনেক ভূমিকা।
শুধু এই সেকশন, কুরবানীর পশু হাট বা বাজারে পশু বিক্রয়ের যে ব্যবসা খাত সেটা বাদে! কিন্তু নারীরাই তো পশু খামার গুলোতে, পশু লালন পালনে, বেশি শ্রম দিচ্ছেন! কেবল এই সেল কেন্দ্র পশু বাজার বাদে। এখানেই নারী তার লালন পালনকৃত পশু সেল করতে, অর্থ সঞ্চয় উন্নয়নে মার খেয়ে যাচ্ছেন বলে, নারী পশুখামারি ব্যাবসিক সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানতে পারি। নারী তার পশু পালনের পারিশ্রমিক বুঝে নিতে ব্যর্থ হচ্ছেন এই একটা বিষয়ে।
যে তার পশুটি সে নিজে উপস্থিতিতে সেল করতে পারছেন না। যখনই সে কোন পুরুষের হাতে, তার লালন পালনকৃত পশুটি দিচ্ছে বিক্রি করার জন্য। তখনই তার পশু বিক্রির লভ্যাংশর পুরা অর্থ বুঝে উঠাতে পারছেন না। পিঁপড়ে খেয়ে নিচ্ছে বলে তারা জানান। যেমন গরুর খড় ভুসি খাওয়ার ক্রয় এর অর্থ ঠিকই কাটছে কিন্তু অন্যের হাতে তার লালন—পালন করা গরু ঠিকমতো খাচ্ছে না। মনমরা হয়ে থাকছে। এতে মনে হচ্ছে যেন গরুটি অসুস্থ!
গরুর গোসলের পানির বিল ঠিকি কাটা যাচ্ছে কিন্তু গোসল করাতে পারছে না। এভাবে তার পশুটি গায়ে গতরে মাংসে শুকিয়ে যাচ্ছে। পশুর তারুণ্যতা হারাচ্ছে। নিঝঝিম ও দুর্বল হয়ে থাকছে। ফলে আশা অনুপাত মূল্যে সঠিক দামে তার কষ্টের লালন পালন করা পশুটি বিক্রয় হচ্ছে না। হ্যাঁ তাই দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে কুরবানীর পশু পালন এবং সেল বাবদ নারীরাও পুরুষের পাশাপাশি আরও বেশি স্বাবলম্বী হতে পারবেন। যদি কর্তৃপক্ষ নারীদের তার লালন পালন করা পশু নিজেরা দায়িত্বে থেকে সেল করার সুযোগ পান। তাহলে তারা সামনে আরো বেশি পশুপালনে উৎসাহ পাবেন।
উদ্যোগী হবেন। সার্ভিস ভালো দেবেন। এতে দেশ অর্থ উন্নয়নে এগিয়ে যাবে। আমি আমার দেশের স্বার্থে, এই বিষয়ে সরকার এবং কর্তৃপক্ষর দৃষ্টি আকর্ষণ করলাম। কেন তৃণমূল পর্যায়ের নারীরা দেশ এবং সমাজের অর্থ খাত উন্নয়নে তাদের ইচ্ছা পোষণের এই সুযোগ পাবেন না? এখন মেয়েরাও তো সংগঠক সাহিত্যিক সাংবাদিক শিল্পী, জজ ব্যারিস্টার ম্যাজিস্ট্রেট পুলিশ দারোগা, ও সি, ডি সি, এস পি, প্রতিষ্ঠানের প্রধান, পরিচালক, এমডি, চেয়ারম্যান, সচিব, মন্ত্রী, এমনকি প্রধানমন্ত্রী হয়ে এই বাংলাদেশই চালাচ্ছেন। ৪ বারেরবার দেশ শাসন করছেন, জননেতা বঙ্গবন্ধুর কন্যা, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা!
তাহলে এই বড় রকমের ব্যবসার সুযোগ কেন নারীদের দেওয়া হবে না? তারা তো অন্যের হাতে তার আদরের পশুটি বিক্রি করতে দিয়ে বিশেষভাবে ব্ল্যাকমেইলে থাকছেন! সারা বছর কষ্ট করে, ব্যয় করে, অনেক আশা বুকে বেঁধে, লালন পালন করছেন! মাত্র বিক্রি করার দুই সপ্তাহ, এক সপ্তার জন্য, অনেক বড় লস তাদের মেনে নিতে হচ্ছে! তাদের পশু অন্যের হাতে খাইনা তখন পশুর গায়ে আঘাত করে! গোসল করাতে পারেনা তখনো পশুর গায়ে আঘাত করে, মারে!! এটা তো সে নারী থেকে নিজে দেখভাল পরিচালনা করলে হয় না?
এইজন্য মেয়েরাও অন্তত এই কোরবানির সময়, বছরে একটা সিজন তারা, তাদের হাতে পালা পশু নিজে থেকে, নিজের হাতে লালন পালন করে, সেল কাজ সম্পন্ন করতে চান। তাই তারাও থাকতে পারবেন, তাদের পশু নিয়ে, সেভাবেই একটা পরিবেশ বা একটা স্পেইস তারা চান। যেই স্পেসের সবই নারী পরিচালিত হবে। থাকা খাওয়ার আবাসিক হোটেল, খড় ভুসি বিক্রয় কেন্দ্র দোকান, আরো অন্যান্য এবং গার্ড সিকিউরিটি পুলিশ যাবতীয় সেকশন নারী দ্বারাই চলবে, ঠিক এমনটাই তারা পেতে চান। তারা বলেন কুরবানির পশু আমরা যদি এভাবে বিক্রি করতে পারি, তাহলে তো নারী ক্রেতারও ভালো। কত নারীই তো কোবাণীর পশু নিজে কিনে থাকেন।
সেই সব নারীরা নারীদের হতে ভালোভাবে দেখে শুনে বুঝে পছন্দের পশুটি কুরবানীর জন্য নিতে পারবেন, অনেক নিরাপদে। এভাবে উভয়েই লাভবান হবে, কেউ প্রতারিত হবে না। আমি দেখলাম যে তাদের মানে পশু পালন কর্মজীবী নারীদের, এই যে দাবি চাহিদা, তা একেবারে ফেলে দেওয়ার নয়। যুক্তি অবশ্যই সঠিক এবং মূল্যবান। নারীদের এই দাবী বাস্তবায়ন হওয়া উচিত। এই দাবি বাস্তবায়ন হোক।
0 মন্তব্যসমূহ