সর্বশেষ খবর

10/recent/ticker-posts

ভাষা সৈনিক হাজী সৈয়দ রফিকুল ইসলাম।।BDNews.in



বিডি নিউজ ডেস্কঃ বাংলাদেশের একজন বীর শ্রেষ্ঠ, ভাষাসৈনিক ও দেশপ্রেমিক হাজী সৈয়দ রফিকুল ইসলাম। যিনি সর্ব বৃহৎ ত্যাগ করেছে এই বাংলাভাষা বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য! সেই বিশ্ব ত্যাগী সৈয়দ রফিকুল ইসলামের বাবা ১৪টি ভাষায় কথাবলা সুদক্ষ পন্ডিত। লেটিন ভাষায় স্পেশিয়ালিস্ট। ব্রিটিশ আন্দোলকদের স্পন্সার, শিক্ষাবিদ, শিল্পপতি, বিশ্বের নানা স্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটির খন্ডকালীন লেকচারার/ প্রফেসর, শিক্ষা ইন্সেপেক্টর, আন্তর্জাতিক সাহিত্য সেবক, সংস্কৃতি প্রেমিক। 

সে সময় অল কুষ্টিয়ার মধ্যে যার ব্যক্তিগত গ্রামোফোনই ছিল ৬০টি। হ্যাচাক লাইট ৫০টি, আর ছিল পিতলের হারিকেন ১০০টি, সোনার ঝর্ণা কলম ৪০টি ইত্যাদি। নানামুখী সৌখিন, প্রভৃতি উপাধিতে কৃতার্থ সৈয়দ নাসির উদ্দিন ওয়াহেদ আলী— ওয়াহেদ আলী মিঞা (১৮৭৪—১৯৩৭ইং)। এতকিছুর পরেও সৈয়দ রফিকুল ইসলামের বাবা ছিলেন আল্লাহভক্ত ইসলামিক ব্যক্তিত্ব।

যার বাড়ির পালানে তার স্ত্রীর প্রতিষ্ঠিত মসজিদ থাকা সত্তেও বসবাসরত ঘরের মধ্যেও ছিল আলাদাভাবে যব্দ আকারে করা চমৎকার নামাজের কামড়া বা রুম। রফিকুলের মাতা: হযরত আল্লামা সৈয়দা মছিরুন নেছা খাতুন (১৮৮২—৩০ আগষ্ট ১৯৪৮ইং) প্রতিষ্ঠাতা— মছিরুন নেসা মসজিদ, গোপালপুর, কুমারখালী, কুষ্টিয়া। 



তাদের ৬ সন্তানের মধ্যে সর্ব কণিষ্ঠ পুত্র— ভাষাসৈনিক, ডাক্তার, শিল্পী, শিক্ষক— সৈয়দ রফিকুল ইসলাম ওরফে সৈয়দ জালাল উদ্দিন ওয়াহেদ আলী— পুনু মিঞা (১৯২৬—৩জুন ২০০৮ইং)। রফিকুলের স্ত্রী আলহাজ্ব সৈয়দা রোকেয়া রফিক ওরফে সৈয়দা রোকেয়া জালাল— তোতা (২৭.০২.১৯৪০—২৭.১২.২০২০ইং) বাংলা: সন ১৩৬১ সালের ২৯ আশ্বিন/ ইংরাজি: ১৯৫৪ সালের ১৪ অক্টোবর, বৃহস্পতিবার তাদের বিয়ে হয়। 

দেশমাতৃকার কাজে অল্প বয়সে ছাত্রবস্থায় ১৯৪৬/১৯৪৭ইং সালে ঢাকায় ছাত্র রাজনীতিতে রফিকুল জড়িয়ে যান। তিনি বঙ্গবন্ধুর সাথেও রাজনীতিতে জড়িয়ে কয়েকবার জেলে যান। তার মধ্যে একবার জেল কতৃপক্ষ বঙ্গবন্ধু ও রফিকুলকে জেলের একই রুমের মধ্যে আটকিয়ে রেখেছিল! কিন্তু এটা একটা বিড়ল ঘটনা, যা জেলখানার দায়িত্ব প্রাপ্ত লোক কখনোই করে না অথচ তারা করেছিল! হয়তো শ্রষ্ঠার ইশারা ছিল তাই।

রফিকুল ১৯৫২ইং সালে ভাষা আন্দোলনে প্রত্যক্ষ সৈনিক হওয়ায় জেলে যান এবং জেলে যাওয়ার দরুণ আই এস সি’র ফাইনাল পরীক্ষা দিতে পারেন নাই। এ সয়য় তিনি জগন্নাথ কলেজে আইএসসি’র শেষ বর্ষের ছাত্র ছিলেন। তিনি ১৯৪৮ইং সালে ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল হতে ফাস্টর্ ডিভিশনে মেট্রিকুলেশন পাশ করেছিলেন। সেই রেজাল্ট হয়েছিলো ৩০আগষ্ট। একই দিন তার মায়ের মৃত্যু হয়েছিল! রফিকুল মিডফোর্ড হাসপাতাল (বর্তমান সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ) হতে ডাক্তারীর উপরে এলএমএফ ডিপ্লোমা সেকেন্ড ইয়ার পর্যন্ত কৃতিত্বের সঙ্গে পাশ করেছিলেন। 

বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধের একজন চক্ষু বিশেষজ্ঞ কতৃর্ক চোখের ভূল চিকিৎসার দুর্ঘটনায়, চোখের জ্যোতির সমস্যা হয়। ফলে মিডফোর্ট হাসপাতালের ডাক্তারের নির্দেশ ক্রমে পড়াশোনা বন্ধ করতে বাধ্য হন। তার জগতি সুগার মিলে বড় পোষ্টে চাকুরী হয়েছিলো। সেখানে ঘুষ অনাচার থাকায় নিজ দেশের ক্ষতি সে মেনে নিতে না পেরে প্রতিবাদ করেন। কিন্তু দুর্নীতির দল ভারী হওয়ায় সফল হতে পারেন নাই। অর্থাৎ দুর্নীতি বন্ধ করতে পারেন নাই। 

যে দেশের কল্যাণের কাজ করার জন্য জীবনের আসল ধন—সম্পদ ধ্বংস করেছেন, আজ স্বাধীন দেশেও সেই অকল্যাণকর কাজে, তার হাত দিয়ে স্বাক্ষর করবেন না। কখনোই না। দেশ মাতৃকার কাছে এই প্রতিশ্রম্নতি রেখে ওয়াদা বা পণ করেছেন সেই ছাত্র জীবনে জেলে বসেই। জীবন থাকতে তিনি সেই শপথ ভাঙতে পারেন না। ফলে স্বেচ্ছায় সেই চাকুরী তিনি অব্যাহতি দেন। 



পরে মাতৃভাষা ও স্বদেশীয় প্রেম অটুট রাখতে এই ভাষাসৈনিক দেশপ্রেমিক ও বঙ্গবন্ধুর পিচ্চি বন্ধু, খুদে বন্ধু, রবীন্দ্র সংগীত, ব্রিলিয়ান্ট বয় (উল্লেখ্য এই ৪টি নামেই তখন শেখ মুজিবুর রহমান নিজে আদর করে রফিকুলকে ডাকতেন)। রফিকুল শিশুদের মধ্যে দেশপ্রেম ও বাংলাভাষার শিক্ষা দিতে, সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকতাকেই বেছে নেন। শিল্পী হিসেবে রফিকুল তার খালাতো বোনের ছেলে বিখ্যাত কণ্ঠশিল্পী আনোয়ার উদ্দিন খানকে গান শিখিয়েছিলেন। 

এছাড়াও বাংলাদেশ বেতারের তাঁর অফার শিল্পী হিসেবে যোগদান করার, খালাতো বোনের ছেলে, আনোয়ার উদ্দিন খানকে তিনি দিয়েছিলেন। যেহেতু বঙ্গবন্ধুর সাথে রাজনীতিতে সময় দিতে হতো এবং ভালো ছাত্র হিসেবে লেখাপড়ারও চাপ ছিল। সবকিছু ইংরেজিতেই যে তখন পড়াশোনা করতে হয়েছে এবং তদবীর, নকল এ ধরনের কিছু তখনকার ছেলেমেয়েরা এখনকার মতো করে নাই। করার কোন সুযোগও ছিল না। তাই অন্য পথে সময় দেন নাই। 

বঙ্গবন্ধু রফিকুলের কণ্ঠে ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি; ও আমার দেশের মাটি তোমার পরে ঠেকাই মাথা; বাংলার মাটি বাংলার জল বাংলার বায়ু বাংলার ফল; ধন ধ্যনে পুষ্পে ভরা আমাদের এই বসুন্ধরা তাহার মাঝে আছে দেশ এক সকল দেশের সেরা, স্বার্থক জনম আমার জন্মেছি এই দেশে, যে তোমার ছাড়ে ছাড়ুক আমি তোমার ছাড়বো না মা, আজ বাংলাদেশের হৃদয় হতে কখন আপনি, আমরা মিলেছি আজ মায়ের ডাকে, আমার সাধ না মিটিল আশা না ফুরালো সকলই ফুরায়ে যায় মা, রবীন্দ্র সংগীত ও দেশাত্মবোধক ইত্যাদি গান শুনতে পছন্দ করতেন। তখনকার স্বাধীনতা আন্দোলনের সেমিনারেও রফিকুল এসব গান গেয়েছেন। 

ভাষা সৈনিক সৈয়দ রফিকুল ইসলাম, ভাষা আন্দোলনের একজন প্রথম সারির প্রতিবাদী মিছিলে অংশগ্রহণ কারী ব্যক্তিত্ব। যা বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্মারক বহন করে। স্বাধিকার আন্দোলনের একজন প্রথমযোদ্ধা। যাঁদের অবদান আজকের এই বাংলা ভাষায় কথা বলা, আজকের এই বাংলাদেশ নামক ভূখন্ডের মানচিত্র পৃথিবীর বুকে লাভ। 



তার বড় ভাই: ভারতের প্রেসিডেন্সী কলেজ এবং কলকাতা ইউনিভার্সিটিতে পড়া শিক্ষাবিদ সৈয়দ মুজাফ্ফর উদ্দিন ওয়াহেদ আলী— খোকা মিঞা (১৯০৫—১৯৪৬ইং) বিদ্যুৎ বা বাজ পরে মারাত্মক দূর্ঘটনাদায়ক অবস্থায় ধুকে ধুকে মারা যান। রফিকুলের একমাত্র বড় বোন সৈয়দা সেলিমা নূরজাহান বেগম— খুকু (১৯০৮—১৩.০৩.১৯৬৩ইং), ছিলেন তখনকার দিনের বেশ কয়েকটি মহিলা সংস্থার নির্বাচিত সভাপতি। কবি কাজী নজরুলের ভক্ত এবং কিছুকাল নজরুলকে অর্থ বৃত্তি দিতেন। খুকুও বাংলাদেশ বেতারে শিল্পীর অফার পান। কিন্তু সম্ভ্রান্ত রক্ষণশীল মুসলিম পরিবার হওয়ায়, পরিবার থেকে বাধাগ্রস্থ হন। এবং সে অফার তিনি গার্ডিয়ান ও গুরুজনদের নির্দেশক্রমে ফিরিয়ে দেন। 

খুকুর স্বামী: ডেপুটি জেলা ম্যাজেষ্ট্রেট খান বাহাদুর সৈয়দ আবুল হাসনাত মোহাম্মদ আব্দুল হাই (১৮৮৪—১৯৪৫ইং)। ইসলামী ধর্মভীরু ব্যক্তিত্ব। যার বাবা তখনকার পীরে কামেল অত্যান্ত ধার্মিক এবং ফরিদপুর গেদ্দর্ার পীর বংশের। যিনি বেঁচেছিলেন ১১৫বছর এবং চাকুরীতে বলবদ ছিলেন ৬০বছর (১৮২১—১৮৮১ইং)। শামসুল উলামা মৌলভী মোহাম্মদ আব্দুস সালাম (১৭৯১—০১.০১.১৯০৬ইং) ছিলেন কলকাতার আলীয়া মাদ্রাসার প্রথম সামসুল উলামা উপাধি প্রাপ্ত হেড মাওলানা। ব্রিটিশ সরকারের দেওয়া যে উপাধি তিনি গ্রহণ না করে বহুকাল ফিরিয়ে দিয়েছেন। অতপরঃ মৃত্যু সন্ধিক্ষণে গোটা ভারতবর্ষসহ সরকারের সম্মান বাঁচাতে এবং অনেক যোগ্য জুনিয়ার মাওলানার সান্তনা দিতে তৎকালীর বাংলার গর্ভনর তাকে সেই উপাধি দিয়ে পরিবেশ আশ্বস্ত করতে বাধ্য হয়েছিলেন! 


এ বিষয়ে রফিকুলের ইমিডিয়েট বড় ভাই লেখক ও প্রবাসী বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ রফিউদ্দিন ওয়াহেদ আলী— বাচ্চু ওরফে সৈয়দ আর. ডব্লিউ আলী বাচ্চু মিঞার একটি রচনা থেকে একটু আধটু অংশ এখানে এ্যাড করলাম:

আমার ভগ্নিপতি ফরিদপুর জেলার এক অতি সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবার হতে আমার একমাত্র বোনের সুবাদে আসেন, যেটাকে সুশিক্ষিত ও সম্ভ্রান্ত পরিবার বলা যায়। যদিও এই পরিবার ছিলেন রফিকুলের বাবা মার পূর্ব আত্মীয়। তাঁরা খুবই ধর্মপ্রাণ লোকও ছিলেন। আমার ভগ্নির শ্বশুর ছিলেন সরকারী চাকুরে, শোনা যায় তিনি মনে করতেন যে রবিবার ও অন্যান্য ছুটির দিবস সমূহে তাঁর বেতন বা পারিশ্রমিক না পাওয়াই উচিত কেননা সেই সব দিনে তিনি কাজ করেন নাই। দুলাভাই (বড় বোনের স্বামী), যে নামে আমাদের কৃষ্টি অনুযায়ী ডাকতাম, তিনি ছিলেন তাঁর সময়ে অতি উচ্চ শিক্ষিত ব্যক্তি। 

বয়োজ্যেষ্ঠদের কাছে শুনেছি যে যখন আমার ভগ্নিপতি বি.এ ডিগ্রি অর্জন করেন তখন তা ছিল একটি বিরল ঘটনা। দূর দূরান্ত, এমনকি পঞ্চাশ মাইল দূর হতেও একজন বি.এ.ডিগ্রি প্রাপ্ত ব্যক্তির দর্শনে কিছু লোক আসতো। তিনি সরকারী উচ্চপদস্থ ব্যক্তিত্বও ছিলেন। ইংরেজ সরকারের অধীনে কাজ করার সময় তাঁকে ‘খান সাহেব’ উপাধি দেওয়া হয়। পরে আবার ১৯২৯ সালে তাঁর কর্মে বিশেষ সন্তুষ্ট হয়ে তৎকালীন ভারতের ভাইসরয় এবং গভর্ণর জেনারেল ১ মার্চ তাকে দার্জিলিং এর শিঁলিগুড়িতে ‘খান বাহাদুর' উপাধিতে ভূষিত করেন। তিনি নিজ পরিবারের জন্য একটি প্রাসাদোপম দালান তৈয়ার করেছিলেন।

সেই প্রাসাদোপম দালান যা আমার ভগ্নিপতি খান বাহাদুর আবুল হাসনাত মোহাম্মদ আব্দুল হাই ১৯৩০ ইং সনে তৈয়ার করেছিলেন। এটা বাংলাদেশের ঢাকায় ১৩১ নং সিদ্দিকবাজারে অবস্থিত। আমার ভগ্নিপতি এই প্রাসাদের নাম রাখেন ‘দারুস সালাম' যার অর্থ শান্তির দূয়ার। ‘সালাম' ছিল তাঁর পিতার নামের এক অংশ। তাঁর পিতার পূর্ণ নাম ছিল শামসুল উলামা মৌলভী মোহাম্মদ আব্দুস সালাম। এই পূর্ণ নামের সাথে দীর্ঘ ইতিহাস জড়িত। এই পূর্ণ নাম তিনি জীবদ্দশায় কোনদিনই ভুলক্রমেও ব্যবহার করেননি। প্রথম দুইটি শব্দ বৃটিশ সরকার কতৃর্ক প্রদত্ত উলামাগণের জন্য সর্বোচ্চ সম্মান সূচক পদ। এটা তৎকালীন সরকারের ৩৫ বৎসরের অধিককাল বিশেষ অনুরোধের পরও মাওলানা আব্দুস সালাম গ্রহণে রাজী হননি। কিন্তু কখনও জনসমক্ষে এর কারণও ব্যক্ত করেননি। 

কারণ, নিশ্চিতভাবেই একাধিক ছিল। এই সম্মানসূচক পদ যেদিন তৎকালীন বঙ্গীয় গভর্ণর ১৯০৬ ইং সনে তার মত ও আপত্তি ছাড়াও দিলেন বলে উচ্চারণ করেন, সেদিনই তিনি মারা যান! কিন্তু সবাই দেওয়া হলো বলে জানান দিলেন ও ধরে নিলেন!! সেদিন এই সম্মান করতে না পারলে সমগ্র ব্রিটিশ প্রশাসনের জন্য একটি অমর্যাদাকর ব্যাপার হচ্ছিল। যেটার হাত থেকে তিনারা বাঁচলেন। তবে তার ওয়াদাও রক্ষা হলো যে ব্রিটিশ সরকার তো তাঁর জীবদ্দশায় বা জ্ঞান থাকাবস্থায় তাঁর হাতে এটা তুলে দিতে পারেন নি। যথাসময়ে তাঁকে এই সম্মান প্রদান করতে না পারার জন্য তৎকালীন উলামা সমাজে প্রচন্ড উষ্ণতার সৃষ্টি হচ্ছিল কারণ তাঁর চেয়ে বয়ঃকনিষ্ঠ অনেক যোগ্যব্যক্তি উক্ত সম্মানসূচক পদ গ্রহণে দীর্ঘকাল বিরত ছিলেন। তিনি এত সম্মানীয় ছিলেন যে, তাকে না দিলে কেউ নিতে পারছিলেন না। 

এই পদবাচক শব্দদ্বয়ের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে উলামাগণের সূর্য। দীর্ঘদিন ধরে গ্রহণ না করার একটি কারণ তাঁর বিশ্বাস মতে এই সম্মানসূচক শব্দদ্বয় তার নিজ নামের সাথে সংযোজিত করা, শব্দদ্বয়েরই মর্যাদা হানিকর ব্যাপার মাত্র। যেটা সাধারণ বিচার বিবেচনায় বোধগম্য হতে পারে না। এই বিবেচনায় তিনি সমগ্র ব্রিটিশ প্রশাসনকেই অতি সাধারণ এর উর্দ্ধে কিছুতেই বিবেচনা করতে পারেননি। এই দালানের একটা মজার ইতিহাস আছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এই দালান ব্রিটিশ সরকার নিয়ে নেয়, ঐ সময়ে ঢাকার প্রধান আকর্ষণীয় ও অতি আধুনিক দর্শণীয় হিসেবে (বাংলাদেশ তখন ভারতের অংশ ছিল এবং ব্রিটিশ উপনিবেশ ছিল)। 



কিছুদিন রেশন অফিস ও পরে এটা মহাবিদ্যালয় (ঢাকা কলেজ) হিসাবে ব্যবহার হয়। আমার কিছু বন্ধু ও আত্মীয় ঐ মহাবিদ্যালয়ে পড়েছে। যখন এটা সরকার থেকে ছাড়ানো হয়, তাদের কলতা বাজারের (রোকনপুর ফাস্ট লেন) ৪২নং বাসা ছেড়ে আমার বোনের পরিবার ওখানে যায়। বিশাল পরিবেষ্টিত জায়গায় আমার সব ভাগ্না ও ভাগ্নির স্ত্রী ও স্বামীদের একটা বড় পরিবার হিসাবে থাকার জন্য সেখানে যথেষ্ট ঘর ছিল। বর্তমানে এক সময়ের সেই প্রাসাদের রক্ষণাবেক্ষণ বেশ অসুবিধাজনক এবং জমির দামও বেড়ে গেছে। আমার ভাগ্না ও ভাগ্নিরা সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে এই দালান ভেঙ্গে এর জায়গায় বেশ কিছু আবাসিক ও বাণিজ্যিক ঘর—বাড়ী তৈরি করবে।

বিশেষ বিবরণঃ ১৩১ সিদ্দিক বাজারের প্রাসাদোপম দালানটি ২০০৫ এর নভেম্বরের মাঝামাঝিতে ভাঙ্গা শুরু হয়েছে এবং আর কিছুদিনের মধ্যেই এই দালানের কোন চিহ্নই আর থাকবে না। এক সময়ের ঐতিহাসিক এ দালানটিকে আরও কিছুদিন ধরে রাখা যেত, কিন্তু নানা কারণে সেটা সম্ভব হয়নি। খান বাহাদুর সৈয়দ আবুল হাসনাত মোহাম্মদ আবদুল হাইয়ের ‘দারুস সালাম' পরবর্তীতে কি হবে শুধুমাত্র সময়ই সেটা বলে দেবে। 

{গ্রন্থ: ‘একই সুতায় বাধা’ রচনা শিরোনাম: খান বাহাদুর সৈয়দ আবুল হাসনাত মোহাম্মদ আবদুল হাই (১৮৮৪—১৯৪৫ইং)— পৃষ্ঠা—১২১/১২২}

রফিকুলের মেজো ভাই ছিলেন নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট এবং পরবর্তীতে নির্বাচিত চেয়ারম্যান (সদকী ইউনিয়ন ১৯৫৩ইং সাল থেকে ১৯৫৬ইং সাল পর্যন্ত), তিনি পরবর্তীতে ছিলেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান (১৯৭২ইং সাল থেকে ১৯৭৬ইং সাল পর্যন্ত) সৈয়দ মহি উদ্দিন ওয়াহেদ আলী— গেদা মিঞা (১৯১০—২০০১ইং)। 



সেজো ভাই: আইন বিশেষজ্ঞ, তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান পরবর্তী নাম বাংলাদেশের সুপ্রীম কোর্টের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রথম আইনজ্ঞ। তিনি ভারতের আইন ব্যবসায় উচ্চ পদস্থ’র চাকুরীরত ছিলেন। সেটা ১৯৪৪—১৯৪৬ইং প্রথম এম. এ পাশ করার পর আয়কর কর্মকর্তা (ভারতীয় রাজস্ব বিভাগের চাকুরী সমান) হিসেবে কাজ করছিলেন। দুইবৎসরের মধ্যে তিনি আয়কর আইনজীবি পেশায় নিয়োজিত হলেন। সেই চাকুরী রিজাইন দিয়ে ছেড়ে আসতে ভারতের আইন বিশেষজ্ঞগণ বিষ্মিত হন! 

কেননা রাজধানীর মতো জায়গা এই ভালো চাকুরি ছেড়ে, কেউ গ্রাম মুখো ছোট শহরে যায় এটা অকল্পণীয়। তবু এসে নিজ জন্মভূমি পূর্ব পাকিস্তান ও পরবর্তী বাংলাদেশের আইন ব্যবসা চালু করেন ঢাকায়। এখানেও কখনো কখনো ছিলেন সরকারের পিপি (ইনকাম ট্যাক্স) নূর উদ্দিন ওয়াহেদ আলী— মণি মিঞা (২১.০৬.১৯১৭ — ০৬.১২.১৯৮৮ইং)। 



নোয়া ভাই ইউ.এস.এ অবস্থানরত প্রকৌশলী, বিশ্বভ্রমণকারী, ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক, প্রবাসী বীর মুক্তিযোদ্ধা ও লেখক সৈয়দ রফি উদ্দিন ওয়াহেদ আলী ওরফে সৈয়দ আর. ডব্লিউ আলী (২৪.০৬.১৯২৪—১৩.০৪.২০১৪ইং)। তিনি দেশ ও দেশের মানুষের জন্য যা নিঃস্বার্থ অবদান রেখেছেন, বর্ণনা দিতে ১০ পাতা লিখলেও ফুরাবে না। 

তবে তার নিজের লেখা ‘একই সূতায় বাধা’ গ্রন্থের ২টি লেখা থেকে একটু একটু অংশ উদাহরণ স্বরূপ এখানে সরাসরি দিলাম:

১৯৬৯ সালে পাকিস্তানের রাজনৈতিক পরিবেশ খুবই উত্তেজনাপূর্ণ ছিল। দেশে সামরিক আইন জারী ছিল। পশ্চিম পাকিস্তানের দমননীতির ফলে, পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক অবস্থা অস্থিতিশীল ছিল। বাঙালীরা সংখ্যায় অধিক হয়ে চেয়েছিল যে মায়ের মুখের বাংলা হবে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা, আর একটা রাষ্ট্রভাষা ছিল উদুর্। কিন্তু মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ, যিনি পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবীদার, তিনি রাষ্ট্রভাষা শুধু একটাই অর্থাৎ উদুর্ করার জন্য দৃঢ়বদ্ধ ছিলেন। এটাই ছিল পাকিস্তান শেষ হওয়ার সূচনা।

 ১৯৭০ সালে পূর্ব পাকিস্তানের একটি জেলা নোয়াখালিতে ঘূর্ণিবার্তা হয়েছিল। এর জন্য উপকূলবর্তী কয়েক লক্ষ লোক আক্রান্ত হয়েছিল। কয়েক হাজার লোকের জীবন হানি হয়েছে এবং শত শত ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। দেশের প্রেসিডেন্ট, আমার বিশ্বাস ‘ইয়াহিয়া খান’ দুই সপ্তাহ পরে নিজে না যেয়ে সাহায্য পাঠিয়েছিলেন। এটা ছিল উটের পিঠে অতিরিক্ত খড় চাপানো যাতে উটের পিঠ ভেঙ্গে গেল। দেশে নির্বাচন হলো এবং পূর্ব পাকিস্তানীরা (সমস্ত জনগণ) শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগকে ভোট দিল। ঐ দল নির্বাচনে জয়লাভ করলো। 

কিন্তু আইন সভা প্রেসিডেন্ট হিসাবে কাজ করতে দেয় নি। পূর্ব পাকিস্তানে বিদ্রোহ শুরু হলো, দাবী ছিল পশ্চিম পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে নতুন দেশ বাংলাদেশ হিসাবে পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতা। যারা দেশ ত্যাগ করে বিদেশে বসবাস করছিল তারাও এই দাবীকে সমর্থন করলো। যুক্তরাষ্ট্রে আমার স্কুলের বন্ধু ফজলুর রহমান খান অন্যদের সঙ্গে মিলে দুটো সংগঠন তৈরী করলো (১) মানবাধিকার সাহায্যকারী বাংলাদেশী প্রতিষ্ঠান, (২) বাংলাদেশ প্রতিরক্ষা লীগ, রাজনৈতিক কার্যকলাপ যেমন রাজনীতিবিদদের প্রভাবিত করার জন্য। ফজলুর রহমান ছিল সভাপতি আর আমি ছিলাম সম্পাদক এবং কোষাধ্যক্ষÑ দু'টো সংগঠনেরই। 

শিকাগোতে ফজলুর রহমানের বাড়ীতে প্রতি শনিবার বিকালে আমাদের সভা হতো। আমার সঙ্গে অনেকের দেখা হতো তার মধ্যে ছিল বাংলাদেশী, আমেরিকাবাসী, ভারতীয় এবং মিশরীয়। এদের মধ্যে একজন বিখ্যাত ব্যক্তি ছিল ড. ইউনুস যে পরবর্তীকালে বাংলাদেশে গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেছিল। সে দরিদ্র লোকদের ক্ষুদ্র ঋণ ব্যবস্থার প্রচলন করলো, বিশেষ করে দরিদ্র মহিলাদের যারা প্রচলিত ব্যাংক থেকে ঋণ পেত না। ১৯৮৬ সালে শিকাগোর একটি ব্যাংক ড. ইউনুসকে নিমন্ত্রণ করলো। বেশ কয়েকজন বাংলাদেশী ঐ অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হয়েছিলেন, তার মধ্যে আমিও ছিলাম একজন। পরে আমি জেনেছি তিনি দক্ষিণে কয়েকটি রাষ্ট্রে গিয়েছিলেন তার মধ্যে ‘আরকানসাস’ একটি যেখানে ‘বিল ক্লিনটন' ছিলেন শাসনকর্তা। 

ক্লিনটন দুই বারের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হয়ে দেশ শাসন করেছেন। তিনি এবং তার স্ত্রী হিলারী ড. ইউনুসের ব্যক্তিগত বন্ধু। ১৯৮৯ সালে ড. ইউনুসের সঙ্গে আমার আবার দেখা হয় যখন আমি ‘মেনোনাইট কেন্দ্রীয় কমিটি'র স্বেচ্ছাসেবক ছিলাম। এটা একটা বেসরাকরী সংস্থা যার প্রধান কার্যালয় ছিল ঢাকায় আসাদ গেটের কাছে। ২০০৫ সালে আমি যখন ঢাকায় গিয়েছিলাম তখন তার সঙ্গে আমার দেখা করার কথা ছিল, কিন্তু তিনি সময় দিতে পারেন নি। শুধু আমরা ফোনে কথা বলেছিলাম। ২০০৬ সালে ড. ইউনুস নোবেল পুরস্কার পান এবং ২০০৯ সালে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বিশ্বের ১৬ জন উচ্চপদস্থ ব্যক্তিকে স্বাধীনতা প্রেসিডেন্ট মেডেল পুরস্কার দেন, তার মধ্যে ছিলেন ড. ইউনুস।

ঢাকায় কাজ করার বৎসরগুলোর সময় আমি অনুভব করলাম যে আমার বাংলাদেশকে কিছু দেওয়া দরকার, যে দেশ আমাকে অনেক কিছু দিয়েছে। বেশ কয়েকবার আমি ঢাকায় বেড়াতে গিয়েছি। আমার কাছে এ দেশ পবিত্র ভূমি যেমন যুক্তরাষ্ট্র। যতবার আমি সেখানে গিয়েছি, সেখানকার জীবনধারণের অবস্থা সত্ত্বেও আমার মানসিক উন্নতি হয়েছে। আমি মক্কা ও মদিনায় কখনও হজ্জ্ব করতে যাই নি। কিন্তু যতবারই আমি বাংলাদেশ ভ্রমণে গিয়েছি আমার মনে হয়েছে আমি পবিত্র স্থান দর্শনে যাচ্ছি। মেনোনাইট কেন্দ্রীয় কমিটি, একটি আমেরিকান কানাডীয় বেসরকারী সংস্থা, যেটা ১৯৭০ সাল থেকে বাংলাদেশে ছিল, সেখানে আমি কাজে ছিলাম। আমি প্রধানতঃ সৈয়দপুরে কর্ম সৃষ্টির কাজে ছিলাম। অবসর নেওয়ার পর ১৯৮৮ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ১৯৯০ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আমি ওখানে কাজ করেছি। (গ্রন্থ ‘একই সুতায় বাধা’ রচনা শিরোনাম: কুমারখালী মথুরানাথ উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয়— (পৃষ্ঠা—৩৫৬/৩৫৭)।



আমি ইলিনয় রাষ্ট্রে রাজপথের বিভাগে ২০ বৎসর কাজ করেছি এবং অনেক পদোন্নতি পেয়েছি। ১৯৭০ সালে পাকিস্তানে যখন গৃহযুদ্ধ হয়, আমি তখন রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় হলাম, ওয়াশিংটন ডি.সিতে স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য সবাইকে প্রভাবিত করতে চেষ্টা করলাম। নিক্সন প্রশাসনের বিরুদ্ধে আমি জন সমক্ষেই সমালোচনা করতে লাগলাম কারণ এরা অস্ত্র সরবরাহ করছিল, যা হাজার হাজার বাংলাদেশীকে হত্যা করতে ব্যবহার করা হয়েছিল। আমি নিক্সনের শক্ত ঘাটি রিপাবলিকান অঞ্চলের বেতার অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছি। ইলিনয় রাষ্ট্রে অনেক সরকারী কর্মচারীদের কাজ বন্ধ হয়ে গেল, আর আমি সরকারী দলে এত সমালোচনা করায় ঝামেলায় পড়লাম। ১৯৭৩ সালে জুলাই মাসে আমার চাকুরী চলে গেল। ভাগ্যক্রমে আমি আমার নিজের শহর এলগিনে সহকারী নগর প্রকৌশলী পদে কাজ পেলাম। 

১৯৮৮ সালে এপ্রিল মাসে আমার অবসর নেওয়া পর্যন্ত আমি এই পদে কাজ করেছি। অবসর নেওয়ার অন্তত ১০ বৎসর আগে আমি অনুভব করলাম যে, আমি আমার জন্মভূমির কাছে কিছু ঋণী। আমি উচ্চ পর্যায় থেকে বাংলাদেশে কিছুদিনের জন্য স্বেচ্ছাসেবকের কাজের ডাক পেলাম। নিশ্চিতভাবেই এটা দিয়ে দেশের দেনা শোধ করা যাবে না, যে দেশ আমার জীবনের শুরু করিয়েছিল। আমি আমার স্ত্রী বেটি আলীর সঙ্গে এ ব্যাপারে আলাপ করলাম। সে ১০০ ভাগ এটাকে সমর্থন দিল। আমরা বুঝলাম যে এ কাজের আদর্শ সময় হবে আমার অবসরের পর। ১৯৭০ সাল থেকে মেনোনাইট কেন্দ্রীয় কমিটি (এম.সি.সি) বাংলাদেশে আছে। ১৯৮৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে এম.সি.সি. আমাকে বাংলাদেশে স্বেচ্ছাসেবক হিসাবে গ্রহণ সরাসরি করলো। (গ্রন্থ ‘একই সুতায় বাধা’ রচনা শিরোনাম: বাংলাদেশী এক গ্রামের ছেলের কথা— পৃষ্ঠা—২৮৭)।



রফিকুল ইসলামের ৯সন্তানের মধ্যে প্রথম সন্তান: স্বাধীনতা যুদ্ধের পূর্ববর্তী সময় কিছুদিন কুষ্টিয়া শহরেও খুলনা খালিশপুর স্কুলের নবম শ্রেণীর নিয়মিত এবং মেধাবী ছাত্রী ছিলেন। ছিলেন অমায়িক ব্যবহার ও অদ্ভূত চেহারার অধিকারী— সৈয়দা রেহেনা আলী— রুনু (১৯৫৭—২২.১১.২০২০ইং) রুনু সম্ভবত ১৪ বছর বয়স থেকেই ভারসাম্যহীন অসুস্থ অবস্থায় বেঁচে ছিলেন। ১৯৭১রের স্বাধীনতা যুদ্ধই ছিল তার এই অভিশপ্ত জীবনের জন্য দায়ী। কেননা রুনুকে রেখে তার সব মামারা মুক্তিযুদ্ধে ভারত পালিয়ে যায়। রুনুর মামীরা ভয়ে রুনুর মা—বাবার কাছে রুনুকে পাঠায়। ভাষাসৈনিক বাবা সৈয়দ রফিকুল ইসলামের চোখের সমস্যায় খারাপ অবস্থায় শরীরের দিক থেকে ছিলেন। 

ভাষা সংগ্রামী মা এবং বাবা সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা, রুনুকে বাড়িতে (উল্লেখ্য বিভূতি ভূষণের পথের পাচালী লেখা বিশাল জঙ্গলাকৃত বাড়ি হওয়ায়) রাখতে ভয় পেয়ে, না দেখে শুনে অজানা অচেনা এক ভদ্রলোকের সাথে বিয়ে দেন, এক মহিলা কবিরাজের মাধ্যমে। কিন্তু সেটা টাঙ্গাইলের কালিহাতীর নয়াবাড়ি গ্রামে। কোথায় কুমারখালী আর কোথায় কালিহাতী! যেখানে যেতে অন্তত ২/৩দিন লাগতো পানি পথে। ফিরানি নাই, কেউ দেখতে যাওয়া নাই, দেশের অবস্থার দূর্যোগ কারো খবর কারো জানা নাই, (উল্লেখ্য বাসের রোড, ফোন, মোবাইল তখন জন জীবনে ছিল না) কিশোরী রুনুর জীবন কিভাবে কেটেছিলো?! পরের ধারে সাত সমুদ্র তের নদী পারে! একটানা ১বছর বা ৩৬৫ দিনেরও অধিক ইত্যাদি। শোনা যায় এক বছরের মাথায় সন্তানও পেটে ধরে রুনুর নাকি?! তখন রুনুরও নাকি ব্রেণ নষ্ট হয়! কিন্তু রুনুর বাবা মায়ের ফ্যামিলি সেটা জানে না। ব্রেণ নস্টর মধ্যে বাচ্চা কনসেপ্ট করে ও ব্রেণ নষ্ট অবস্থায় বাচ্চা ভুমিষ্ট হয়। এরও অনেক পর রুনুর শ্বশুড় বাড়ির মানুষ ও রুনুর স্বামী রুনুকে এই কুমারখালীর গোপালপুর গ্রামে রুনুকে দেখাতে আসে বাচ্চাসহ। হায়! কি সুন্দর রুনুর এই অবস্থা! রুনুকে পাবনা মেন্টালে বেশকিছুদিন রাখার পরেও কোনদিন ভালো হয় নাই! সে তার অতীন অনুভূতি হারা!? 

বর্তমানও বোঝে না। যত রকম নির্যাতনই করা যাক, সে কোন প্রতিবাদ করতে জানে না! দ্বিতীয় সন্তান: সৈয়দা রাশিদা বারী। যার ডাক নাম তার ভাষাসৈনিক বাবা সৈয়দ রফিকুল ইসলামের দেওয়া অঞ্জলী। ভাষা সংগ্রামী এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা মামা {নজরুল ইসলাম রাদু— জন্ম:১৯৩৭ইং (এম.এ.পাশ) ম্যানেজার— খুলনা জুট মিল, রশিদ ব্রাদার্স} এর দেওয়া বেবী এবং অনেকগুলো ছদ্দ নাম আছে লেখালেখির পাদদেশে। ভাষাষৈনিক কন্যা, কবিরত্ন সৈয়দা রাশিদা বারী একাধারে একজন প্রথিতযশা কথা সাহিত্যিক, কথাশিল্পী, কবি, সাংবাদিক, গীতিকার, প্রকাশক—সম্পাদক, গবেষক ও বিজ্ঞানী। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের গবেষক এবং বিজ্ঞানী। তবে তিনি একজন যুগোপযোগী লেখক লোকবিজ্ঞানী। 



সৈয়দ রফিকুল ইসলামের এই কন্যা একজন সাত্ত্বিক সাদা মনের প্রাকৃতিক মানুষ। সমাজ প্রকৃতির গবেষক ও দার্শনিক। নারী গবেষক, নারী ও শিশু চিন্তাবিদ। মা বাবার পরিসরে ভাই—বোন সমঅধিকার প্রতিষ্ঠার প্রবক্তা। নারীর ক্ষমতায়ন মূল্যায়ন ও বাস্তবায়নে পুত্র—কন্যাকে আলাদা দেখেন না, বিশেষ করে মা—বাবার ঘরে প্রাপ্ত অংশ অর্থ—সম্পদ, ভালোবাসা ও অধিকারের ক্ষেত্রে। রফিকুলের কন্যা সৈয়দা রাশিদা বারী একজন আপাদমস্তকে পায়ের নখ থেকে মাথার চুল পর্যন্ত সংস্কৃতি ব্যাক্তিত্ব, সংস্কৃতিসেবী, উদার মনের প্রগতিশীল সমাজসেবক। 

দেশ সমাজ বিনির্মাণে যার লেখনী আমাদেরকে একটি সভ্য, সত্য ও সৃজনশীল সুন্দর সমাজ গঠনে আলোর বর্তিকা। আমাদের দেশের উন্নয়ন ও নারী পুরুষের স্থায়ীত্ব সুখ শান্তির সঠিক পথ দেখায়। তিনি নারীর নিরাপত্তা, মা ও শিশু স্পেশাল ভাবে নবজাতকের নিরাপত্তা, এসমস্ত নিয়ে কাজ করেন, লেখালেখি ছাড়াও সমাজ বিনির্মানে। 

তিনি তাঁর লেখনীর মাধ্যমে সমাজ, সংস্কৃতি, দেশ, জাতির, কল্যাণকর তথ্য সমৃদ্ধ করেন ও মন্দ কাজে নিরুৎসাহিত করেন। পিছু ফিরে না দেখে সাহসের সাথে প্রতিবাদ ব্যক্ত করে থাকেন। ভাষাসৈনিক সৈয়দ রফিকুল ইসলামের কন্যা সৈয়দা রাশিদা বারী এ সকল ভালো কর্মকান্ডের জন্য প্রশংসিত। নিজের প্রতি না মুগ্ধ থেকে সার্বিক পর্যায়ে মানুষের উন্নয়ন উন্নতির কাজ করায় তিনি দেশ বিদেশের নামী দামী বিভিন্ন পুরষ্কার অর্জন করেছেন। তাঁর রচিত প্রকাশিত গ্রন্থ সংখ্যা শতাধিক। আরো অন্তত ১শতটির কাজ চলছে। তার রচিত হামদ, নাত গজল ও গানের সংখ্যা ৪হাজারের অধিক। প্রবাদবাক্য ৫হাজারের অধিক। ভাষাসৈনিক সৈয়দ রফিকুলের কন্যা রাশিদা সাহিত্য ও সাংস্কৃতির উপরে এওয়ার্ড সংবর্ধনা, সম্মাননা, পুরুষ্কার, ক্রেস্ট, উত্তরীয়, মানপত্র, প্রশংসাপত্র ইত্যাদি পেয়েছেন স্থানীয়, জাতীয়, আন্তর্জাতিকসহ ৮০টিরও অধিক। সেইসাথে তিনি নানা সময় নানা উল্লেখযোগ্য সংস্থান ও সংগঠন কতৃর্ক— বিভিন্ন খেতাব বা উপাধিতে ভূষিত হয়েছেন। 

প্রাপ্ত উপাধি: ১. কাব্যশ্রী, ২. কাব্যরত্ন, ৩.কবিরত্ন, ৪. বাংলাদেশরত্ন, ৫. ভারতরত্ন, ৬. সাহিত্যরত্ন, ৭. সাহিত্য পদ্মভূষণ, ৮. সাহিত্য বিষারদ, ৯. সাহিত্য সাগর, ১০. সাহিত্য রানী, ১১. রাধা রাণী দেবী, ১২.সাহিত্য স্বরসতী, ১৩. সাহিত্য বিদ্যা বিনোদন, ১৪. সাহিত্যেশ্বর, ১৫. সরস্বতীর মানস কন্যা, ১৬. সরস্বতী মায়ের মানস কন্যা, ১৭. মা সরস্বতীর মানস কন্যা, ১৮. বঙ্গেশ্বর, ১৯. ভাষা সৈনিক কন্যা, ২০. সব্যসাচী লেখক, ২১. জীবন্ত কিংবদন্তী।

প্রাপ্ত সম্মাননা/পুরস্কার: ১. বাংলাদেশ জাতীয় লেখক ফোরাম (ঢাকা) বেগম রোকেয়া পদক; ২. বাংলাদেশ লেখিকা সংঘ (ঢাকা) সাহিত্য সংবর্ধনা; ৩. বাংলাদেশ কবিতা সংসদ (পাবনা) বাংলা সাহিত্য পদক; ৪. সুললনা স্বাধীনতা পদক (রাজশাহী); ৫. নোঙর সাহিত্য পুরষ্কার (ঈশ্বরদী); ৬. আরশী নগর বাউল সংঘ (রাজবাড়ী) সাহিত্য পুরস্কার; ৭. কুষ্টিয়া উন্নয়ন পরিষদ এর স্বর্ণপদক ও নাগরিক সংবর্ধনা; ৮. জাতীয় সাংবাদিক সংস্থা (ঢাকা); ৯. শতাব্দী সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্রের সম্মাননা (ঢাকা); ১০. সাপ্তাহিক বিচিত্র সংবাদ পত্রিকার সাহিত্য সম্মাননা (ঢাকা); ১১. জাতীয় মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস রিভিউ সোসাইটি (ঢাকা); ১২. বাউল তরী সাংস্কৃতিক পরিষদ, উত্তরা, (ঢাকা) উত্তরীয়, মেডেল, ক্রেস্ট ও সার্টিফিকেট। ১৩. শেখ সাদি (রহঃ) সম্মাননা পুরস্কার; ১৪. মাওঃ জালালউদ্দিন রুমি পুরস্কার; ১৫. সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজী সাহিত্য পুরস্কার (সিরাজগঞ্জ); ১৬. কবি জীবনানন্দ দাশ সাহিত্য পুরস্কার (কুয়াকাটা, পটুয়াখালী); ১৭. কবি জসীমউদ্দীন স্বর্ণপদক, কবি জসীমউদ্দীন পরিষদ, ( ফরিদপুর) ১৮. কবি বে—নজীর আহমদ (ঢাকা ১৯. কবি আজিজুর রহমান স্বর্ণপদক; কবি আজিজুর রহমান পরিষদ, (কুষ্টিয়া—ঢাকা) ২০. বঙ্গবন্ধু সাহিত্য সম্মাননা (ঢাকা); ); ২১. ড. এম. এ ওয়াজেদ মিয়া আন্তর্জাতিক স্বর্ণপদক (ঢাকা); তাছাড়াও ভারত থেকে ২২. আন্তর্জাতিক আলো আভাষ; ২৩. আন্তর্জাতিক বিশ্ব বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলন এর আন্তর্জাতিক সাহিত্য পুরস্কার, ২৪. ‘এবং বাউল’ পত্রিকা ও ২৫. ‘কুশুমে ফেরা’ সংস্থার যৌথ উদ্দে্যাগে দেওয়া নেতাজি সুবাস স্মৃতি পুরস্কার লাভসহ ভারতেরও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান থেকে ২০টি সংবর্ধনা ও সাহিত্য পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। এছাড়াও ভারতের হিন্দু সম্প্রদায় কতৃর্ক ভারতরত্নসহ ৪টি উপাধি পেয়েছেন। 

রফিকুল ইসলামের কন্যা সৈয়দা রাশিদা বারী’র কর্মযোগ্য অবদান সম্পর্কে কিছু তথ্য দেওয়া হলো:

সাংবাদিকতায় অবদান: ১. দৈনিক আজকের সংবাদ, ঢাকা এর বিশেষ প্রতিনিধি; ২. সাপ্তাহিক বাংলার ধারা চিত্র এর সাহিত্য সম্পাদক; ৩. দৈনিক আল আমীন, ঢাকা এর সাবেক বিভাগীয় সম্পাদক/নারী ও শিশু বিভাগের প্রধান এবং পূর্বে কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধি ছিলেন। ৪. দৈনিক জনপদ, ঢাকা এর সাবেক বিশেষ সংবাদদাতা; ৫. সাবেক বিশেষ সংবাদদাতা — দৈনিক নিরপেক্ষ, ঢাকা। ৬. মাসিক ডাকপিয়ন (ঢাকা) এর চীফ রিপোর্টার — সাবেক প্রধান প্রতিবেদক এছাড়াও পূর্বে অন্যান্য দৈনিকে ছিলেন।

সাংগঠনিক ক্ষেত্রে: ১. প্রতিষ্ঠাতা—সাধারণ সম্পাদক: শতাব্দী সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্র (বৃহত্তর কুষ্টিয়া)। ২. প্রতিষ্ঠাতা প্রধান/ ভূতপূর্ব সাধারণ সম্পাদক: বাংলাদেশ লেখিকা সংঘ (কুষ্টিয়া জেলা শাখা)। ৩. প্রতিষ্ঠাতা—সাধারণ সম্পাদক: আধুনিক সাহিত্য পরিষদ (কুষ্টিয়া, বাংলাদেশ)। ৪. প্রতিষ্ঠাতা—সভাপতি: বাংলাদেশ আধুনিক সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক পরিষদ, ঢাকা, বাংলাদেশ। ৫. প্রতিষ্ঠাতা—সভাপতি: বাংলাদেশ ভাষাসৈনিক প্রজন্ম সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক পরিষদ, ঢাকা, বাংলাদেশ। ৬. প্রতিষ্ঠাতা—সভাপতি: ভাবনায় বাংলাদেশ, ঢাকা, বাংলাদেশ। ৭. প্রতিষ্ঠাতা— নির্বাহী সদস্য: ড. মযহারুল ইসলাম স্মৃতি পরিষদ (ঢাকা)। ৮. সহ—সভাপতি: বাউল তরী শিল্পী গোষ্ঠী, ঢাকা। ৯. উপদেষ্টা: ‘বন্ধন’ কালচারাল ফোরাম, ঢাকা। ১০. উপদেষ্টা: ‘শুদ্ধচিত্র বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন’, ঢাকা। ১১. যুগ্ম সম্পাদক: জয় বাংলা সাংস্কৃতিক পরিষদ, ঢাকা। ১২. সাবেক সহ—সম্পাদক: বাংলাদেশ জাতীয় লেখক ফোরাম, ঢাকা। ১৩. বিভাগীয় সচিব: জাতীয় গীতি কবি পরিষদ, ঢাকা। ১৪. নির্বাহী সদস্য: বাংলাদেশ টেলিভিশন শিল্পী সমিতি, ঢাকা। ১৫. প্রাক্তন নির্বাহী সদস্য: জাতীয় সাংবাদিক সংস্থা— ঢাকা, কেন্দ্রীয় পরিষদ ইত্যাদি। 

স্থায়ী সদস্য/জীবন সদস্য/সম্মানীত জীবন সদস্য: ১. বাংলা একাডেমি (ঢাকা); ২. লালন একাডেমী (কুষ্টিয়া); ৩. জেলা শিল্পকলা একাডেমী (কুষ্টিয়া); ৪. বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি (কুষ্টিয়া শাখা); ৫. বাংলাদেশ লেখিকা সংঘ (ঢাকা); ৬. ঢাকাস্থ কুষ্টিয়া জেলা সমিতি (ঢাকা); ৭. কুষ্টিয়া পাবলিক লাইব্রেরী; কুষ্টিয়া ৮. কুমারখালী পাবলিক লাইব্রেরি, কুমারখালী, কুষ্টিয়া; ৯. কবি সংসদ বাংলাদেশ, ঢাকা; ১০. ভারত—বাংলাদেশ সাহিত্য সংস্থা, ঢাকা, ভারত; ১১. কলকাতা—ঢাকা মৈত্রী পরিষদ ঢাকা, কলকাতা; ১২. আন্তর্জাতিক আলো আভাস সাহিত্য সাংস্কৃতিক সংস্থান (ভারত); ১৩. সার্ক কালচারাল ফোরাম এবং ১৪. বিশ্ববঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলন (ভারত); ১৫. ড. এম. এ ওয়াজেদ মিঞা মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশন (ফরিদপুর) ইত্যাদি। এই মহিয়সী গড়িয়সী লেখকের জন্ম: সংস্কৃতির রাজধানী কুষ্টিয়া। তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার ও চলচ্চিত্রের গীতিকার। সম্পাদক—প্রকাশক জাতীয় সচিত্র মাসিক ’স্বপ্নের দেশ’ ঢাকা।

আমাদের গর্ব আমাদের মাঝে সৃষ্টিকর্তা এধরনের একজন জ্ঞানী ও গুণী পাঠিয়েছেন। অথচ কবি বলেছেন কবির যত ক্রেডিট ও প্রশংসা সব কবির বাবা মায়ের। ভাষাসৈনিক, ভাষাসংগ্রামী ও সহযোগী বীর মুক্তিযোদ্ধা বাবা মায়ের দেওয়া আদর্শই নাকি, তার আসল সম্পদ ও লেখালেখির পাথেয়। তিনি অতি তুচ্ছ এবং সামান্য বলে নিজেকে মনে করেন। কিন্তু তার বাবা মাকে মনে করেন এদেশের বীর সন্তান এক মহা মূল্যবান রত্ন! সৈয়দ রফিকুল ইসলাম সর্বোচ্চ জীবনের দূর্যোগ ও প্রতিকুলতা কাটিয়েও তার ৯সন্তানকে যোগ্যতা সম্পন্ন উপযুক্ত করেছেন। তার সন্তানরা প্রত্যেকে যার যার স্থানে নিজেদের মতোন, স্বসম্মানে রয়েছেন। কেউ দেশের কোন অনাচার ও দূর্ণীতির সাথে জড়িত নেই। এটা একটা বিরাট মহীরুহ! কেননা ভাষা আন্দোলন করায় যিনি ইন্টারমিডিয়েট (আই এস সি) ফাইনাল পরীক্ষা দিতে পারেন নাই। আবার মিডফোর্ড হাসপাতালে ডাক্তারী পড়ার ফাইনাল পরীক্ষা দিতে পারেন নাই। 

একমাত্র ভাষা আন্দোলনে জেলে থাকা ও মাতৃভাষার শত্রুমুক্ত করার পর থেকে আবার দেশের বা জন্মভূমির স্বাধীনতা আন্দোলনে সংশ্লিষ্ট থাকার কারণে। অথচ তিনি দুটিতেই সেকেন্ড ইয়ার পর্যন্ত খুব ভালো রেজাল্ট করেছিলেন। দেশের উত্তাল পরিস্থিিতির মুখে বারবার দূর্ঘটনা ঘটায় নিজের শেষ ভালো করতে পারেন নাই। তাই জীবনে সামাজিক মানসিক ও শারীরিক অনেক কষ্ট করেছেন। 

তার মধ্যেও তিনি সন্তান মানুষ করার প্রতি ছিলেন আপ্রাণ সচেষ্ট। তাই সন্তানদের অমানুষ না বানিয়ে ইসলামের আদর্শে এত সুন্দর করে মানুষের মতো মানুষ বানিয়েছেন। তাইতো এই ভাষা সৈনিক সৈয়দ রফিকুল ইসলাম গর্বের সাথে প্রশংসার দাবীদার। প্রকৃতভাবেই তিনি একজন রত্নগর্ভ বাবা! তার স্ত্রীও রত্নগর্ভা মা!



ভাষাসৈনিক সৈয়দ রফিকুল ইসলামের তৃতীয় সন্তান: হাজী সৈয়দ মশিউর রহমান — দোদুল (তুহিন সৈয়দ) ইসলামিক ধর্মভীরু, ব্যবসায়ী ও সৌখিন ব্যাক্তিত্ব, পরিচালক— বাংলাদেশ ভাষাসৈনিক প্রজন্ম সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক পরিষদ, ঢাকা। চতুর্থ সন্তান: হাজী ডা. সৈয়দা সূরাইয়া বেগম (মিনি) অত্যান্ত ধর্মভীরু, মানবিক পরায়ণ ব্যক্তিত্ব, ইসলামী চিন্তাবিদ ও ধর্ম বিষয়ক সচিব— বাংলাদেশ ভাষাসৈনিক প্রজন্ম সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক পরিষদ, ঢাকা। পঞ্চম সন্তান: আলহাজ্ব ডা. সৈয়দা সাবিনা ইয়াসমিন (কলি) এম.বি.বি.এস— এম.এম.সি (সৌদী প্রবাসী), ধর্ম বিষয়ক উপসচিব— বাংলাদেশ ভাষাসৈনিক প্রজন্ম সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক পরিষদ, ঢাকা। রফিকুল ইসলামের ষষ্ঠ সন্তান: হাজী সৈয়দ হুমায়ূন কবীর (শাহীন) ইনকাম ট্যাক্স ও কোম্পানী পরামর্শক — হুমায়ূণ এন্ড কোম্পানী, অর্থ সচিব— বাংলাদেশ ভাষাসৈনিক প্রজন্ম সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক পরিষদ, ঢাকা। সপ্তম সন্তান: আলহাজ্ব সৈয়দ হারুন উর রশীদ ওরফে সৈয়দ এইস আর দারা সোহেল (দারা) আমেরিকা প্রবাসী, চেয়ারম্যান— বাংলাদেশ ভাষাসৈনিক প্রজন্ম সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক পরিষদ, ঢাকা।। ভাষা সৈনিক সৈয়দ রফিকুল ইসলামের অষ্টম সন্তান: সৈয়দা সিলভিয়া বেগম (শিলা) ইসলাম ও হাদীস কেতাব আলোচক— প্রচারক, নির্বাহী সদস্য— বাংলাদেশ ভাষাসৈনিক প্রজন্ম সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক পরিষদ, ঢাকা। নবম সন্তান: হাজী সৈয়দ বদরুদ্দোজ্জা খান মজলিশ বিদ্বান (ব্যাংকার— আল—আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক লিঃ, ঢাকা), নির্বাহী সদস্য— বাংলাদেশ ভাষাসৈনিক প্রজন্ম সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক পরিষদ, ঢাকা।

এতক্ষণ জেলখাটা দেশপ্রেমিক, জেলখাটা আসল ভাষাসৈনিক সৈয়দ রফিকুল ইসলামরে সুদীর্ঘ কর্মময় থেকে কিছু, জানলাম। তার ব্যাগ্রান্ড— পূর্বপুরুষ এবং উত্তর পুরুষ প্রজন্ম সম্পর্কে শুনলাম, বুঝলাম। নিম্নের ৫টি সংগঠন ও মাসিক স্বপ্নের দেশ পত্রিকার সকল সদস্যর পক্ষ থেকে আমি এমন নির্ভিক দেশপ্রেমিক, ভাষাসৈনিক সৈয়দ রফিকুল ইসলামের বিধেয় আত্মার মাগফেরাত এবং বেহেস্ত নছীব কামনা করছি। আমিন।


অনলাইন নিউজ পোর্টাল বিডি নিউজ ডট ইন পরিবারও সৈয়দ রফিকুল ইসলামের বিধেয় আত্মার মাগফেরাত এবং বেহেস্ত নছীব কামনা করছি, আমিন।




লেখক পরিচিতি: সৈয়দ আবু বোরহান জাকারিয়া (খোকা) 

ব্যবস্থপণা সম্পাদক:

১. শতাব্দী সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্র, বৃহত্তর কুষ্টিয়া শাখা। 

২. আধুনিক সাহিত্য পরিষদ— কুষ্টিয়া, বাংলাদেশ। 

৩. অনুপ্রাস সাহিত্য পরিষদ, কুষ্টিয়া শাখা। 

৪. বাংলাদেশ ভাষাসৈনিক প্রজন্ম সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক পরিষদ, ঢাকা। 

৫. বাংলাদেশ আধুনিক সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক পরিষদ, ঢাকা। 

৬. জাতীয় সচিত্র মাসিক ‘স্বপ্নের দেশ’, ঢাকা।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ