সর্বশেষ খবর

10/recent/ticker-posts

কুরিয়ার সার্ভিসে চলছে প্রশাসনিক কাজ, আত্মগোপনে প্রধান শিক্ষক।।BDNews.in


গোলাম সরোয়ার , কুমারখালী ( কুষ্টিয়া) প্রতিনিধিঃ ঘড়ির কাঁটায় তখন সকাল ১০ টা বেজে ৪৯ মিনিট। বিদ্যালয়ে তখনও আসেননি প্রধান শিক্ষক। কক্ষে পড়ে আছে চেয়ার টেবিল আসবাবপত্র। কোন শিক্ষক ক্লাশে পড়াচ্ছেন। আবার কোনো শিক্ষক বসে আছেন। সোমবার (১৯ আগষ্ট) এমন চিত্র দেখা যায় কুষ্টিয়ার কুমারখালীর জোতমোড়া মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে। এটি উপজেলার যদুবয়রা ইউনিয়নে অবস্থিত।

শিক্ষকদের ভাষ্য, প্রধান শিক্ষক আব্দুর রাজ্জাকের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা চলছে। মামলায় হাজিরা না দেওয়ায় তিনি এখন ওয়ারেন্ট ভুক্ত আসামি। মুভমেন্ট খাতায় বিদ্যালয়ের বিশেষ কাজ দেখিয়ে তিনি প্রায় এক মাস বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত। তবে জুলাই মাসের সম্পূর্ণ বেতন তুলেছেন প্রধান শিক্ষক। 

এদিকে বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের অনুপস্থিতির বিষয়টি জানেন না উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কাজী এজাজ কায়সার। তিনি এই প্রতিনিধিকে বলেন, বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থেকে বেতন তোলার নিয়ম নেই। বৈধ ছুটি ছাড়া বিদ্যালয়ের বাইরে থাকারও বিধান নেই। বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সভাপতি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

জানা গেছে, ২০২২ সালের ১ অক্টোবর জোতমোড়া মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে অফিস সহায়ক কর্মচারী হিসেবে মো. মেহেদী হাসান শান্ত ও জোসনা বেগমকে নিয়োগ দেওয়া হয়। উক্ত নিয়োগ প্রাপ্তদের এমপিও ভুক্ত করার জন্য ওই বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর যদুবয়রা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মিজানুর রহমানের সিল ও স্বাক্ষর জালিয়াতি করে ' বিদ্যালয়ের অবস্থান ' জনিত প্রত্যায়ন তৈরি করেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এবং তৎকালীন পরিচালনা পরিষদের সভাপতি মো. আজিজুল হক।

বিষয়টি জানতে পেরে ২০২৩ সালের ২৭ এপ্রিল কুষ্টিয়ার বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কুমারখালী আমলী আদালতে ধারা - ৪২০/ ৪৬৬/ ৪৬৭/ ৪৬৮/ ৪৬৪/ ৪৭১/ ৪৭২/ ৪৭৬ দণ্ডবিধিতে মামলা করেন চেয়ারম্যান। মামলায় দুই কর্মচারী, প্রধান শিক্ষক ও তৎকালীন সভাপতিকে আসামি করা হয়। চলতি বছরের ১৪ জুলাই উক্ত মামলায় আসামিদের আদালতে হাজিরার দিন ধার্য ছিল। সেদিন দুই কর্মচারী ও তৎকালীন সভাপতি আদালতে হাজিরা দেন। তবে গ্রেফতারের ভয়ে সেদিন আদালতে যাননি প্রধান শিক্ষক। এরপর ১৫ জুলাই থেকে তিনি আত্মগোপনে রয়েছেন।

১৫ জুলাই বিদ্যালয়ের মুভমেন্ট খাতার একটি পাতা এই প্রতিনিধির হাতে এসে পৌছেছে। সেখানে লেখা রয়েছে। " আমি আব্দুর রাজ্জাক, প্রধান শিক্ষক অত্র বিদ্যালয়। আমি বিদ্যালয়ের কাজে কয়েকদিন বিদ্যালয়ে উপস্থিত থাকতে পারবোনা। আমার অবর্তমানে বিদ্যালয়ের অফিসিয়াল কাজের দাঁয়িত্ব পালন করবেন বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ইংরেজি মো. রেজাউল হক। " 

আরো জানা গেছে, প্রধান শিক্ষক না থাকায় ভেঙে পড়েছে বিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ব্যবস্থা। ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক কার্যক্রম। তবে অতি জরুরি কাগজপত্রাদিতে স্বাক্ষর প্রয়োজন হলে তা প্রথমে পাঠানো হচ্ছে শিক্ষকের বাড়িতে। এরপর গোপননীয়তা রক্ষা করে স্বজনরা সেগুলো কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে পাঠান শিক্ষকের কাছে। স্বাক্ষর শেষে স্বজনরা আবার তা পাঠিয়ে দেন বিদ্যালয়ে। এমন অবৈধ প্রক্রিয়ায় জুলাই মাসের বেতন বিলে স্বাক্ষর করেছেন অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক।

বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রেজাউল হক এই প্রতিনিধিকে বলেন, সঠিক বেঠিক আমি জানিনা। ১৫ জুলাই মুভমেন্ট খাতায় মন্তব্য লিখে আমাকে দাঁয়িত্ব দিয়ে চলে গেছেন প্রধান শিক্ষক। আর ফিরে আসেনি। ফোনেও কথা হয়নি আর। কোথায় আছেন তাও জানিনা আমরা।

তিনি আরো বলেন, প্রশাসনিক কার্যক্রম থেমে আছে। শুধু মানবিক কারণে শিক্ষক - কর্মচারীদের বেতনের প্রয়োজনীয় কাগজপত্রাদি প্রধান শিক্ষকের বাড়িতে দিয়ে এসেছিলাম। স্বজনরা কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে তা স্বাক্ষর করিয়ে দিয়েছেন। স্বাক্ষরে ৭ আগষ্ট তারিখ লেখা আছে। প্রধান শিক্ষকসহ সকলের জুলাই মাসের বেতন স্ব স্ব হিসাব নম্বরে জমা হয়েছে। 

তাঁর ভাষ্য, আদালতে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা চলছে। মামলায় হাজিরা না দেওয়ায় তিনি বর্তমানে ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি। উচ্চ আদালত থেকে জামিন নেওয়ার জন্য ঢাকায় আছেন প্রধান শিক্ষক।

প্রধান শিক্ষক আব্দুর রাজ্জাকের মুঠোফোনটি বন্ধ থাকায় বক্তব্য পাওয়া যায়নি। সরেজমিন শিক্ষকের বাড়িতে গেলে তাঁর স্ত্রী নাম প্রকাশ না করা শর্তে এই প্রতিনিধিকে বলেন, মাসখানেক হল আমার স্বামী বাড়িতে নেই। কোথায় আছে তাও সঠিক জানিনা। মাঝে মাঝে বিভিন্ন নাম্বার দিয়ে কল দেয়। এতটুুকুই জানি। তাঁর ভাষ্য, উচ্চ আদালত থেকে জামিন নেওয়ার জন্য তাঁর স্বামী ঢাকাতে থাকতে পারেন।

যদুবয়রা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মিজানুর রহমান জানান, দুই কর্মচারীর এমপিও ভুক্তকরণে বিদ্যালয়ের অবস্থান জনিত প্রত্যায়নে তাঁর স্বাক্ষর, সিল জালিয়াতি করে প্যাড তৈরি করা হয়েছিল। তিনি প্রধান শিক্ষকসহ ৪ জনের নামে মামলা করেছেন। মামলাটি আদালতে চলমান।

জোতমোড়া মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের বর্তমান সভাপতি জিয়াদুল ইসলাম মিলন এই প্রতিনিধিকে বলেন, প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ে আসেননা - এই বিষয়টি আমার অজানা ছিল। সেজন্য ভুল করে বেতন বিলে আমি সই করেছি। তবে খুব দ্রুতই প্রধান শিক্ষককে শোকজ করব। এবং আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ( ইউএনও) এস এম মিকাইল ইসলাম বলেন, শিক্ষা কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপ করে বিধিমতে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ