তার জন্ম ও বেড়ে ওঠা রংপুরে। রংপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও রংপুর সরকারি কলেজ থেকে পড়াশোনা। পরিবারের সদস্য বাবা- মা ও একমাত্র ছোট বোন। ছোট বেলা থেকেই নিগার সুলতানা স্বাধীন চিন্তা চেতনার মানুষ হিসেবেই বেড়ে উঠেছেন।
নিগার সুলতানার পছন্দ-খেলাধুলা, সাইকেল চালানো, পুকুরে মাছ ধরা, গান করা, নাচ করা আর শখ- রান্না করা ও রং নিয়ে খেলা করা মানে বুটিকস ও হান্ডিক্রাফ্ট।
নিগার সুলতানা বলেন, আমার মেরুদন্ড আমার "বাবা" আর আমার "মা" হল শক্তি। সবসময় ইচ্ছে ছিল নিজের একটা প্রতিষ্ঠান তৈরি করা যেখানে মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি হবে। আমার বাবা চাইতেন আমি যেন মানুষের জন্য ভাবি, মানুষকে নিয়ে কাজ করি আর এই ভাবনা নিয়েই বড় হয়ে ওঠা। ধীরে ধীরে কাজের জন্য নিজেকে তৈরি করা, স্বপ্ন ভালো কিছু হবে।
আমার কাজের হাতেখড়ি আমার মা ও খালামনির কাছে। বাবা ছাড়াও আমার মামাদের কাছেও সবসময় সহযোগীতা পেয়েছি। এক কথায় পারিবারিক ভাবে সবসময় উৎসাহ ও সহযোগীতা পেয়েছি এবং এখনো পেয়ে আসতেছি।
২০১৮ সালে বাবা হঠাৎ করে চলে গেলেন না ফেরার দেশে। ঐ মূহুর্তে মনে হয়েছিল মেরুদন্ড ভেঙ্গে গিয়েছে আমার, নিজেকে শক্তিহীন মনে হয়েছিল। এদিকে মা ও বোনের দেয়া উৎসাহ শক্তি তৈরীতে সাহায্য করেছে, নিজেকে আবার ফিরিয়ে আনতে শুরু করি। নিজের স্বপ্নের ও লক্ষ্যের রাস্তায়। তখন আস্তে আস্তে পেতে শুরু করি আমার সকল সহ-যোদ্ধাদের।
তিনি আরো বলেন, আমি হান্ডিক্রাফ্ট হোম মেইড ফুড নিয়ে কাজ শুরু করি।শুরুর দিকে একা কাজ করলেও এখন আমার (হ্যান্ডিক্রাফ্ট ও খাবার) দুটো মিলে প্রায় ২৫ জন কর্মী কাজ করছে এবং সিদ্ধান্ত নেই একা নয় সবাইকেই নিয়ে কাজ হবে এখন।
আমি নিগার সুলতানা, টাচ্ বুটিকস এন্ড ফ্যাশান হাউস (হ্যান্ডিক্রাফ্ট), আর এন ক্রিয়েশন'স (খাবার) দুটো পেজ এর ওনার। আমি পণ্যের গুণগত মান নিয়ে কম্প্রোমাইজ করিনা, আমার সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা থাকে কাজের মান যেন ঠিক থাকে। আমার পণ্য হ্যান্ডিক্রাফট, যেমন- হাতের তৈরী বিভিন্ন ধরনের শো-পিস, মোম, গ্লাস পেইন্ট, গহনা, ক্রিস্টাল+ক্লে+পুঁথির ওয়ার্ক ইত্যাদি, টাই-ডাই, ব্লক, বাটিক, হ্যান্ডপেইন্ট, স্ক্রীন পেইন্ট, সুই-সুতার কাজ করা -থ্রি পিছ, শাড়ী, চাদর, পাঞ্জাবি, ফতুয়া সহ বাচ্চাদের কাস্টমাইজ কাপড়। এছাড়া পাটপণ্য - ম্যাট, ব্যাগ, গহনা ইত্যাদি নিয়ে কাজ করা হয় ।
হোম মেইড খাবার এর মধ্যে রয়েছে - বিভিন্ন ধরনের সস, জ্যাম-জেলি, ফ্রোজেন রেডি ফুড, পিঠা, ডেজার্ট, কেক ইত্যাদি।
আমি নিগার সুলতানা বহুদূর যেতে চাই, বেঁচে থাকতে চাই মানুষের মনের মধ্যে। স্বপ্ন নিজের একটা ব্রান্ড তৈরি করা এবং আউটলেট দেয়া। সাংগাঠনিক ভাবে উদ্যোক্তাদের নিয়ে কাজ করা, পাশাপাশি দুস্থদের নিয়ে কিছু করা।আমার এবং আমাদের জন্য সবাই দোয়া করবেন।
নতুন নারী উদ্যোক্তাদের জন্য আমার পরামর্শ- স্বাবলম্বী হয়ে বেঁচে থাকার স্বার্থকতাটাই আলাদা। তাই বলবো, একজন সফল নারী উদ্যোক্তা হলে আপনাকে অবশ্যই ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে মাঠে নেমে পড়তে হবে। প্রতিবন্ধকতা থাকবেই, তবে ইচ্ছা থাকলে তা ওভারকাম করা সম্ভব। স্বপ্ন, সামান্য পুঁজি আর পরিশ্রম থাকলেই অনেক দূর এগিয়ে যাওয়া যায়।
0 মন্তব্যসমূহ