প্রিয় মুক্তি,
কেমন আছিস ? আমার শরীর- মন কিছুই ভালো নেই। কেন যে বয়রা কলেজে ভর্তি হতে গেলাম! আমি ভেবেছিলাম হোস্টেলে সবাই অনেক আনন্দে থাকে। কিন্ত,এটা তো একটা জেলখানা। মেয়েরা কীকরে এখানে থাকছে, আমি জানিনা। শোন, এক রুমে পাঁচ জন থাকে। আমি সবার ছোট। বাকীরা আমার বড়।
ছোট হয়ে মনে হচ্ছে অনেক বড় দোষ করে ফেলেছি। তাদের কথা মতো আমাকে চলতে হবে। একজন বড় আপা আমাকে মাটির কলস ভরে কল থেকে পানি আনতে বললেন। একথা শুনে আমিতো হতভম্ব হয়ে গেলাম! খাটটা এতো ছোট!!! পাশ ফিরলেই পড়ে যাবো। বিনা কারণে "মেট্রন আপা" সারাক্ষণ চীৎকার করেন। একজন বড় আপা বললেন,"মেট্রন আপা" এখনো বিয়ে করেননি। তাই ওঁর মেজাজ সবসময় খারাপ থাকে। বিয়ে না করার সাথে মেজাজের কী সম্পর্ক, ঠিক বুঝলাম না।
একদিন বিকেলে কলেজ গেটের বাইরে যেতে চেয়েছিলাম ফুটপথ থেকে পত্রিকা কেনার জন্য। দারোয়ান যেতে দিলেন না। অথচ আমার সামনে দিয়ে "ডেইজী" আপা বেরিয়ে গেলেন। তাকে কিছুই বললেন না। আমি এ কথা বলতেই অভদ্রের মতো আমাকে বললেন, তুমি কী নেত্রী? নতুন আইছো। এখনি বাইরে যাওয়ার ধান্দা। যাও হোস্টেলে। তা নাহলি "সুপার ছার" রে কয়ে দেবো। রাগে-দুঃখে আমার চোখে পানি এসে গেল। একজন এস.এস.সি পাশ মেয়ের সাথে কীভাবে কথা বলতে হয়, সেটা এই মূর্খ জানেনা।
মুক্তি, আমি বুঝতে পারিনি যে তোদের ছেড়ে আমি থাকতে পারবো না। সারাক্ষণ তোদের কথা মনে পড়ছে। শিল্পী কেমন আছে? কেমন আছে লীনা, খাদীজা, কুমকুম? তোরা কী এক সাথে কলেজে যাস? আমি জানি,তোরা অনেক মজা করছিস আর আমি লুকিয়ে লুকিয়ে কাঁদছি। আগামীকাল "বু" আর "দুলাভাই" আমাকে দেখতে আসবেন।
আমি ওঁদের সাথে চলে যাবো। এখানে থাকবো না। বু' কে বুঝিয়ে বোলবো, আমাকে যেন নড়াইলে পাঠিয়ে দেবার ব্যবস্হা করেন। আব্বাকে আমি বলতে পারবো না। তিনি ভী-ষ-ণ রেগে যাবেন। তুই একটু খোঁজ নিস কলেজে। আমি কী এখন "ভিক্টোরিয়া" কলেজে ভর্তি হতে পারবো? আমার তো ভী-ষ-ণ কষ্ট হচ্ছে।
আমার চিঠি পাওয়ার সাথে সাথে জবাব দিস। দেরী করিস না। এখন রাখছি। আব্বাকেও চিঠি লিখতে হবে। তিনি বলেছেন,প্রতি সপ্তাহে চিঠি পোস্ট করতে। বড় ভাই বলেছেন, তাঁকেও ঢাকায় নিয়মিত চিঠি লিখতে হবে। আমার কী কোনো কাজ নেই? সারাদিন শুধু চিঠি লিখবো?
"খালাম্মা" ও "কাকা" কে আমার সালাম দিস। ভালো থাকিস সব সময়। আমি তোদের অনেক ভালোবাসি।
ইতি
তোর মমতা
১০/৯/১৯৮৭
0 মন্তব্যসমূহ