সর্বশেষ খবর

10/recent/ticker-posts

১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস।।BDNews.in


বিডি নিউজ ডেস্কঃ ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ এবং গৌরবময় অধ্যায়। এই মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ পাকিস্তান থেকে স্বাধীনতা লাভ করে এবং একটি নতুন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে পৃথিবীতে আত্মপ্রকাশ করে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস একটি নির্দিষ্ট সময়ে পাকিস্তান ও বাংলাদেশ (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) মধ্যে ঘটে যাওয়া রাজনৈতিক, সামরিক এবং সাংস্কৃতিক সংঘর্ষের মধ্য দিয়ে তৈরি হয়। এই মুক্তিযুদ্ধের ঘটনা এবং তার পূর্বাভাস নিয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক নিচে তুলে ধরা হলো।

প্রেক্ষাপট: ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ ভারত বিভক্ত হয়ে পাকিস্তান এবং ভারত দুটি দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। পাকিস্তান দুটি অংশে বিভক্ত ছিল — পশ্চিম পাকিস্তান (বর্তমানে পাকিস্তান) এবং পূর্ব পাকিস্তান (বর্তমানে বাংলাদেশ)। দুই অংশের মধ্যে বিশাল ভৌগোলিক দূরত্ব এবং সাংস্কৃতিক পার্থক্যের কারণে পূর্ব পাকিস্তান বারবার পশ্চিম পাকিস্তানের দ্বারা বৈষম্যের শিকার হয়। এছাড়া, ভাষা, অর্থনীতি, এবং প্রশাসনিক দিক থেকেও পূর্ব পাকিস্তান অধিকার বঞ্চিত ছিল।

১৯৭০ সালের নির্বাচন: ১৯৭০ সালে পাকিস্তানে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচন পূর্ব পাকিস্তানে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে শেখ মুজিবুর রহমান ব্যাপক বিজয় লাভ করেন। আওয়ামী লীগ ১৬২টি আসনের মধ্যে ১৬০টি আসন জিতে, পাকিস্তান জাতীয় পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। কিন্তু, পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী এই ফলাফল মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানায় এবং শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন চাওয়া হয়।

মুক্তিযুদ্ধের সূত্রপাত: ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তান সেনাবাহিনী "অপারেশন সার্চলাইট" শুরু করে, যার মাধ্যমে ঢাকাসহ বিভিন্ন শহর ও গ্রামে ভয়াবহ গণহত্যা চালানো হয়। শেখ মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে এই হামলা পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের মধ্যে তীব্র প্রতিরোধের জন্ম দেয়, এবং ২৬ মার্চ শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। এর পর থেকে, পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়।


মুক্তিযুদ্ধের প্রধান ঘটনাবলি -

  • ২৫ মার্চের গণহত্যা: পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ঢাকায় হামলা চালিয়ে হাজার হাজার বাঙালিকে হত্যা করে এবং শহরের বড় অংশ ধ্বংস করে। এটি বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের সূচনা ছিল।
  • মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধ: বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় মুক্তিযোদ্ধারা সশস্ত্র প্রতিরোধ শুরু করে। নারী, শিশু, পুরুষ, কৃষক, ছাত্র, শিক্ষক—সকলেই মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন।
  • ভারতের সমর্থন: ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর নেতৃত্বে ভারত বাংলাদেশকে মুক্তিযুদ্ধে সহায়তা প্রদান করতে শুরু করে। ভারতীয় সেনাবাহিনী পাকিস্তানকে পরাজিত করে বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে নিশ্চিত করে।
  • পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পরাজয়: ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১, পাকিস্তান সেনাবাহিনী অবশেষে ঢাকায় আত্মসমর্পণ করে। এটি বাংলাদেশের স্বাধীনতার চূড়ান্ত বিজয়ের দিন হিসেবে স্মরণীয় হয়ে থাকে।


মুক্তিযুদ্ধের পরিণতি: মুক্তিযুদ্ধের পর বাংলাদেশ একটি স্বাধীন, সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তান সেনাবাহিনী ঢাকা শহরে আত্মসমর্পণ করে এবং বাংলাদেশের বিজয় নিশ্চিত হয়। শেখ মুজিবুর রহমানকে বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি হিসেবে ঘোষণা করা হয় এবং তিনি ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি দেশে ফিরে আসেন। 

মুক্তিযুদ্ধের গুরুত্ব: বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ শুধু একটি স্বাধীন দেশের সৃষ্টি নয়, বরং এটি বাঙালি জাতির আত্মপরিচয়ের সংগ্রামও ছিল। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাঙালি জাতি তাদের অধিকার ও স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা করে এবং বিশ্বের মানচিত্রে একটি নতুন রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটে।

গণহত্যা ও মানবাধিকার লঙ্ঘন: মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানি বাহিনী এবং তাদের সহযোগী হিসেবে যে অপরাধগুলো ঘটানো হয়, তাতে লক্ষ লক্ষ বাঙালি শহীদ হন। নারীদের ওপর ব্যাপক ধর্ষণ, নির্যাতন এবং হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়। এ সমস্ত ঘটনাগুলো মানবাধিকারের সবচেয়ে বড় লঙ্ঘন হিসেবে ইতিহাসে চিহ্নিত হয়েছে। 

স্বাধীনতার পর: বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর একটি নতুন রাষ্ট্র গঠনের কাজ শুরু হয়। তবে দেশটি রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছিল। তবে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং স্বাধীনতার মূল্যবোধ বাঙালির জাতীয় জীবনের ভিত্তি হিসেবে অবিচ্ছেদ্য হয়ে আছে।

এটি ছিল ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস, যা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময়, সংগ্রামী ইতিহাসের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

1 মন্তব্যসমূহ

  1. ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, লেখাটা আমার অনেক ভালো লেগেছে। তবে আমি মনে করি বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ""জিয়াউর রহমান"" স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।

    উত্তরমুছুন