একজন সফল উদ্যোক্তা হওয়ার পেছনে আমার মনে হয় সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হচ্ছে পরিশ্রম আর ধৈর্য। পরিশ্রম আর ধৈর্য এই দুটো জিনিস যদি আপনার মধ্যে না থাকে তাহলে আপনি কখনো আপনার লক্ষ্যে বেশি দূর এগোতে পারবেন না। প্রচুর পরিশ্রম করুন আর ধৈর্য ধরুন একদিন আপনি সফল হতে পারবেন ইনশাআল্লাহ।
গাজী রণী শ্রাবণী বলেন, নিজের নামে পরিচিত হওয়ার একটা ইচ্ছা ছোটবেলা থেকেই ছিলো, সেই রেশ ধরেই ক্লাস সেভেনেই প্রথমবার কোন প্রতিযোগিতায় অংশ নেই,এবং প্রথমবারেই বরিশাল বেতারে শিশুশিল্পী হিসেবে সুযোগ পাই গানে। এরপর অসংখ্য পুরস্কার পেয়েছি। ২০০১ এ পেয়েছি জাতীয় পুরস্কার।
২০০২ এ ড.মোহাম্মদ ইউনুস এর উপস্থিতিতে গ্রামীন ব্যাংক থেকে সাংস্কৃতিক বৃত্তির জন্য সিলেক্ট হই।প্রশিক্ষক হিসেবে ছিলাম বরিশাল ক্যাডেট কলেজের লেডিস ক্লাবে।এ ছাড়াও কলেজের বিএনসিসির সেনা শাখার ক্যাডেট হিসেবেও ছিলাম এবং সুযোগ পাই ক্যাম্পিং এ খুলনা রেজিমেন্টে।
এই সব কিছুর পিছনে আমার ব্রেইনে কাজ করেছে বাবার একটি কথা"নিজ নামে পরিচিত হও, মানুষ যেন বলে ওমুকের বাবা "
২০০৬ সালে বিয়ের পরে টুকটাক বিজনেস শুরু করি, ২০০৮ এ নিজের প্রথম আউটলেট নেই, এবং গ্রামের মেয়েদের ফ্রিতে হাতের কাজের প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ ও স্বাবলম্বী করার উদ্যোগ নেই। ২০০৯ সালে প্রথম সন্তান মারা যাওয়ায় সব কিছু থেকে দূরে সরে থাকি।
এরপর আবার এক সন্তান এলো ২০১০ এ, সময়টা ওকে নিয়েই কেটে গেল। ২০১৪ সালে আবার শুরু করি, তবে এবারে শুধু অফলাইনে নয় অনলাইনেও। এক দিকে বিজনেস আরেকদিকে প্রশিক্ষণ, ৬ টি ম্যাসেন্জারে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চলত। তখন পুতির কাজ, নকশী সেলাই ব্লক, বাটিক, ক্লে আরও কিছু কাজ।
তখনও ফেইসবুক গ্রুপের বিষয় মাথায় আসেনি। এভাবে চলছিল, আর দেশের বিভিন্ন জেলার মানুষ কাজ শিখত, দিন দিন যখন মেম্বার বাড়ছিল তখন ২০১৭ সালে ফেইসবুক গ্রুপ ক্রিয়েট করি "নকশী কাঁথার মাঠ" নামে। যেটা এখন "NKM E-COMMERCE SOCIETY " নামে পরিচিত।
আমরা শুরু থেকেই স্কিল ডেভেলপমেন্ট নিয়েই কাজ করি।আমি বিশ্বাস করি সর্বপ্রথম নিজের স্কিল বাড়ানো উচিত,উদ্যোক্তা হিসেবে সর্বপ্রথম আমি প্রশিক্ষণ নেই যুব উন্নয়ন থেকে, এবং হস্তশিল্প প্রশিক্ষক হিসেবেও কাজ করি যুব উন্নয়ন এর সাথে। এরপর বিসিকের সাথে সম্পৃক্ততা,২০২০ এ বিসিক থেকেও নিবন্ধন নেই আমার উদ্যোগের,বরিশাল বিসিকে ই-কমার্স মার্কেটিং এর উপরে প্রশিক্ষক হিসেবেও কাজ করেছি। আইসিটি বিষয়ক প্রশিক্ষণ নিয়েছি এসএমই ফাউন্ডেশন থেকে।
ধীরে ধীরে আমরা ব্যক্তিগত উদ্যোগ ছাড়াও বিভিন্ন সরকারি সেক্টরের সাথে কাজ শুরু করি বিভিন্ন জেলায়। ২০২৩ সালে গ্রুপ সংগঠন এ রূপ নিয়েছে। আমাদের কার্যক্রম ও বৃদ্ধি পেয়েছে, এ যাবত ৩০ এর অধিক জেলাতে আমরা বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দিয়েছি।
উদ্যোক্তা উন্নয়ন এ আমরা আরও একটা কাজ করি, একদম প্রান্তিক পর্যায়ের কিছু উদ্যোক্তাদের আমরা আর্থিক সহায়তা করে থাকি, তাদের উদ্যোগকে এগিয়ে নিতে।এ ছাড়াও আমরা বিভিন্ন সামাজিক কাজেও অংশ নেই,শীতবস্ত্র বিতরণ, ঈদ উপহার বিতরণ, চিকিৎসায় সহযোগিতা, দরিদ্র শিক্ষার্থীদের আর্থিক সহায়তা, বন্যার্তদের সহযোগিতা।
যেকোন কাজ করতে গেলে ডিমোটিভেটেড করার মানুষের সংখ্যা বেশি, তবে কিছু মানুষ থাকে যারা যোগ্যতার মূল্যায়ন করে এবং সঠিক গাইডলাইন দেয়ার চেষ্টা করে। আমার কাজে আমার বাবা মায়ের পরে যারা সহযোগিতা করেছে তাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।
যুব উন্নয়ন আমাকে সম্পৃক্ত করেছে ২০১৯ সালে যুব উন্নয়ন বাবুগঞ্জ কর্মকর্তা এ কে এম শহীদুল ইসলাম,এর আগে আমার যুব উন্নয়ন সম্পর্কে তেমন আইডিয়া ছিলনা। যুব উন্নয়ন বরিশাল জেলা অফিসের বর্তমান ডিডি শামীম চৌধুরী এবং এডি প্রিন্স বাহাউদ্দীন তালুকদার যথেষ্ঠ আন্তরিক এবং উদ্যোক্তা বান্ধব।
বরিশাল বিসিক সাবেক ডিজিএম জালিস মাহমুদ সানি যার কাছ থেকে শিখেছি সফল উদ্যোক্তা হওয়ার দারুন কিছু কৌশল এবং লিডারশীপ এর পজেটিভ এবং নেগেটিভ দিক, যেটা আমার পরবর্তীতে ভীষণ কাজে দিয়েছে, বিসিকের সাবেক চেয়ারম্যান মোস্তাক হোসেন এনডিসি স্যার অবসরে থাকলেও বিসিকের সকল বিষয়ে আমাকে সহযোগিতা করার চেষ্টা করেন।
এছাড়াও বিভিন্ন বিষয়ে আমার যোগ্যতার উপরে সর্বদাই সাপোর্ট দিয়েছে আরো কিছু মানুষ ভোক্তা অধিদপ্তরের সাবেক ডিজি সফিক জামান স্যার, যুব উন্নয়ন এর বর্তমান ডিজি গাজী সাইফ জামান স্যার। উদ্যোক্তাদের একটা বড় সমস্যা থাকে আর্থিক সাপোর্ট, দেশের বিভিন্ন ব্যাংক কাজ করছে উদ্যোক্তাদের নিয়ে, ব্যাংকিং সকল পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করে বাংলাদেশ ব্যাংকের এসএমই ডিপার্টমেন্ট, বিশেষ কৃতজ্ঞতা ডেপুটি ডিরেক্টর নজরুল ইসলাম স্যারের প্রতি।
আমাদের এখনকার টার্গেট উদ্যোক্তাদের বিভিন্ন ট্রেডে প্রশিক্ষণ এর পাশাপাশি, উদ্যোক্তাদের অফলাইন থেকে অনলাইনে সফল এবং প্রতিষ্ঠিত হওয়ার জন্য সকল প্রশিক্ষণ দেয়া। উদ্যোক্তারা ৬৪ জেলাব্যপী তাদের বিজনেস বিস্তারের পাশাপাশি ভৌগোলিক গন্ডি পার হয়ে দেশের বাইরেও নাম করবে।
আর এই টার্গেট পূরণে বর্তমানে গ্রুপে ৭/৮ জন এডমিন রয়েছে, রয়েছে একঝাঁক মর্ডারেটর,প্রতি জেলা, উপজেলা প্রতিনিধি, যারা প্রতিনিয়ত গ্রুপ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজ করছে, কৃতজ্ঞতা তাদের প্রতি, যারা উদ্যোক্তাদের নিয়ে আমার সপ্নটাকে নিজেদের মধ্যেও ভাগ করে নিয়েছে।
নারীরা কেউ কাজ করে শখে, কেউ জীবিকার জন্য, আমরা মূলত কাজ করি তাদের সঠিক গাইডলাইন দেয়ার জন্য, কারন আমি চাই"শখ থেকেই হোক কর্মের শুরু "।
1 মন্তব্যসমূহ
অসংখ্য ধন্যবাদ
উত্তরমুছুন